বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দাবি এখন জামায়াত নিষিদ্ধের ও গ্রেনেড হামলার বিচারের

লাকমিনা জেসমিন সোমা

দাবি এখন জামায়াত নিষিদ্ধের ও গ্রেনেড হামলার বিচারের

অধ্যাপক পান্না কায়সার

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ  কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারও বিচার দাবি করেছেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক এই সংসদ সদস্য এসব দাবি জানান। সম্প্রতি শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির প্রতিক্রিয়ায় পান্না কায়সার বলেন, স্বাধীনতার পর ৪৪ বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করেছি। কেবল শহীদ পরিবার হিসেবে নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এতদিন ধরে কতটা রক্তক্ষরণ হয়েছে তা কেবল আমরাই জানি। যুগ যুগ ধরে কষ্টে ছিল শহীদদের আত্মাও। তিনি বলেন, সেদিন যখন ফাঁসির রায় কার্যকর হচ্ছিল বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ঘুরিয়ে সেটিই দেখছিলাম। হঠাৎ আমার চোখের ওপর ভেসে উঠল ১৯৭১ সালের সেই ১৪ ডিসেম্বর। আমার ওই মানুষটা (শহীদুল্লাহ কায়সার) যেন জীবন্ত হয়ে উঠল তখন। এরপর সারাক্ষণ ওর ওই স্মৃতির সঙ্গেই আলাপন করেছি। জানি না, ছয় মাসের ছেলে ও দেড় বছরের মেয়ের যে দায়িত্ব আমার ওপর রেখে গিয়েছিল তা পালন করতে পেরেছি কিনা। হয়তো দেশবাসীই বলতে পারবে। বিশিষ্ট এই লেখিকা ও বুদ্ধিজীবী বলেন, আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও উপযুক্ত সাজার বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, আনন্দের। আর এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারা যায় না। আজকে বলতেই হচ্ছে, ‘বাপ-কা বেটি’। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে পান্না কায়সার বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধী আরও যারা আছেন, তাদেরও বিচার করবেন। তার এই যে সাহসি পদক্ষেপ, ধীরশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রম এবং কথা দিয়ে কথা রাখার নীতি আমাদের এ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশিষ্ট এই রাজনীতিক তার প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেন, ফাঁসির রায় কার্যকরের সেদিন নতুন প্রজন্মের যারা শাহবাগে বা দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্লাস করেছে, তাদের দেখে কেবল সেই ১৬ ডিসেম্বরের সকালটির কথাই আমার বারবার মনে হয়েছে। স্বাধীনতা জয়ের সেই সকালে মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে আনন্দ নিয়ে ঢাকা শহরে ঢুকেছিল। ক্ষণে ক্ষণে ফিরে গেছি সেই স্মৃতিগুলোতে। বারবারই মনে হয়েছে আমার কাছে জীবন্ত মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে। তার সঙ্গে আলাপন হচ্ছে। কষ্টের মাঝেও তখন এটুকু সান্ত্বনা পেয়েছি যে-  বিচার হয়েছে, আরও বিচার হবে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন কমিটেড মানুষ। তিনি দেশ মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে সোনার বাংলা করার জন্য তার যেই দৃঢ়তা সেই দৃঢ়তার পদক্ষেপ কিন্তু এখানেই শুরু হয়েছে। কিন্তু আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করাটা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ধ্বংস করতে অনেক অপপ্রচেষ্টাই তো হয়েছে। জামায়াতের মতো অনেক স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এদেশে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। এখন আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এসব চক্রের মূলোৎপাটন করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে ইতিহাস টেনে পান্না কায়সার বলেন, বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী ছিলেন! আর সে কারণেই তিনি দেশে এসেই জামায়াত-ছাত্রসংঘ নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, একটি চক্র ’৭৫ সালে সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করল। এরই মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিল তারা। অথচ আমরা দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্রকারী রাজাকারদের সঙ্গে বাস করেছি। তাদের গাড়িতে পতাকা দেখেছি। তাদের আস্ফালন দেখেছি। বিভিন্ন স্থানে তাদের দ্বারা হত্যাকাণ্ড পরিচালনার দৃশ্য দেখেছি। আর সে কারণেই আশাকরি প্রধানমন্ত্রী জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন এবং তা বাস্তবায়নও করবেন। কেননা এই জাতির জন্য, নতুন প্রজন্মের জন্য এবং আমার আপনার সবার বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

কেবল যুদ্ধাপরাধীর বিচারই নয়, ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর গ্রেনেড হামলারও বিচার দাবি করেন এই রাজনীতিক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা তার মধ্যে বড় উদাহরণ। আমি এই গ্রেনেড হামলার সত্যিকার বিচার দাবি করছি।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতকে যারা সহযোগিতা করেছেন, জামায়াতের পাশে বসে যারা সভা-সমিতি করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন, তাদের কাছে টেনে ক্ষমতায় এসেছেন, আমি মনে করি তাদেরও মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। সুতরাং তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর