শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলি

দরজা আটকে হামলা । মুয়াজ্জিন নিহত । ইমামসহ গুলিবিদ্ধ ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও বগুড়া

বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলি

হামলার পর মোহাম্মদপুর আল মোস্তফা জামে মসজিদের রক্তাক্ত মেঝে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার পর এবার শিয়া মসজিদে হামলা চালিয়েছে অস্ত্রধারীরা। বগুড়ার শিবগঞ্জের একটি মসজিদে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জিম হোসেন (৬০) নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন ইমামসহ তিন মুসল্লি। গতকাল সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর হামলা চালিয়ে অস্ত্রধারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। মসজিদে হামলার এ নজিরবিহীন সহিংস ঘটনার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পুরান ঢাকার হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে হামলার পরিকল্পনাকারী আল বানী ঢাকায় ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই শিয়া মসজিদে অস্ত্রধারীদের এ হামলার ঘটনা ঘটল। শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনার পর র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পয়েন্ট টু বোরের ৭ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। পুলিশের ধারণা, তাজিয়া মিছিলে হামলাকারী জঙ্গিরাই শিয়া মসজিদে হামলা চালিয়েছে।

নিহত মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জিম হোসেনের বাবার নাম বছির উদ্দিন। তার বাড়ি বগুড়ার হরিপুর উত্তরপাড়ায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন মসজিদের ইমাম উপজেলার চককানু মধ্যপাড়ার মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মাওলানা শাহীনুর রহমান (৩৫), আলাদিপুরের খরু মণ্ডলের ছেলে আবু তাহের মিস্ত্রী (৫৫) ও চককানু গ্রামের মৃত কুদু মিয়ার ছেলে আফতাব আলী (৫০)।

জানা যায়, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের হরিপুরের মোহাম্মদপুর আল মোস্তফা জামে মসজিদে শিয়া অনুসারীরা নামাজ আদায় করেন। ইরান সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ইনামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন শিবগঞ্জ হরিপুর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরান দূতাবাসের সহযোগিতায় ফাউন্ডেশন ও মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ইনামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন শিবগঞ্জ হরিপুর শাখার অর্থ সম্পাদক শাহীনুর আলম জানান, শিয়া সম্প্রদায়ের পাঁচ শতাধিক মানুষ ওই এলাকায় বাস করেন। মাগরিবের নামাজ শেষে মসজিদের বাইরের গেট বন্ধ করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গুলি ছুড়েই পালিয়ে যায় তারা। কয়েকজন মুসল্লি জানান, মাগরিবের নামাজের পর এশার নামাজের আগ পর্যন্ত পরপর কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পান মুসল্লিরা। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে তারা দেখতে পান। মুসল্লিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মসজিদ থেকে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জিম হোসেন (৬০) মারা যান। অন্য দুজন তাহের ও শাহীনুর বগুড়া মেডিকেল কলেজে এবং আফতাব আলী শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। খবর পেয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে।

মসজিদের মুসল্লি সোনা মিয়া জানান, ধারণা করা হচ্ছে মসজিদের মেইন গেট থেকে দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়ে। মসজিদের তিনটি দরজা রয়েছে। এর একটির পাশ থেকে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়েছে। মসজিদে থাকা ১৮-২০ জন মুসল্লির মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ হন।

শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবীব জানান, মাগরিবের নামাজের পর দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়েছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, মোয়াজ্জিম নামের একজন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পয়েন্ট টু বোরের ৭ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে গ্রেনেড হামলায় ১১৫ জন আহত হন। ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোরের এবং পাঁচ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামাল উদ্দিন নামে ৫৫ বছর বয়সী আরও একজনের মৃত্যু হয়। বুধবার রাতে হামলার পরিকল্পনাকারী আল বানী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। গ্রেফতার হন আরও পাঁচজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর