শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নামসর্বস্ব শরিকদের নিয়ে ঝামেলায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

নামসর্বস্ব শরিকদের নিয়ে ঝামেলায় বিএনপি

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আসন্ন পৌর নির্বাচনে অন্তত চারটি পৌরসভায় লড়তে চায়। আজ বিএনপির কাছে তালিকা পাঠাবে এনপিপি। দুই ভাগে বিভক্ত এনপিপি এখনো নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত নিবন্ধনভুক্ত হতে পারেনি। জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। তারাও অন্তত চার পৌরসভায় প্রার্থী দিতে চায়। ইসলামী ঐক্যজোট নিজেদের প্রার্থী দিতে চায় অন্তত ১০টি পৌরসভায়। জোটের অন্যতম বৃহৎ শরিক জামায়াতে ইসলামী অন্তত ৪৫টি পৌরসভায় লড়তে চায়। বিএনপির কাছে জোটের শরিকরা অন্তত ১০০ পৌরসভায় নিজ নিজ দলের পৃথক প্রার্থী দিতে চান বলে জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হচ্ছে ২৩৬টি পৌরসভায়। ‘নামসর্বস্ব’ এসব দলের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে বিএনপি। প্রতিটি পৌরসভায় বিএনপিরই একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে জোটের শরিকরাও ভাগ বসাতে চায়। দলীয় ‘একক’ প্রার্থীর পাশাপাশি জোট নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে দলটি। এদিকে জোটের শরিকদের প্রার্থী তালিকা বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। বিএনপি ছাড়া জোটভুক্ত অন্য দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, বিজেপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (জাফর) ও সাম্যবাদী দল। এর মধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে। জোটের ছয়টি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। জানা যায়, আসন্ন পৌর নির্বাচনে কল্যাণ পার্টি থেকে ১১ জন লড়তে চান। দলটি দু-এক দিনের মধ্যে তালিকা বিএনপির কাছে পাঠাবে। জাগপা দলীয় পাঁচ প্রার্থীর তালিকা তৈরি করে বিএনপির কাছে পাঠিয়েছে। লেবার পার্টিও লড়তে চায় পাঁচটিতে। তারাও প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছে বিএনপির কাছে। অন্য দলগুলোও পৃথকভাবে পাঁচ-সাতটি করে প্রার্থী তালিকা বিএনপির কাছে পাঠিয়েছে। কেউ কেউ ই-মেইলে আবার কেউ বিএনপির মুখপাত্রের কাছে তালিকা পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপাতত আমরা সবগুলো পৌরসভায় দলীয় একক প্রার্থীর তালিকা করছি। পরে জোটের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে কিছু পৌরসভা ছেড়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতার মাপকাঠির বিষয়টিকে মাথায় রাখা হবে। এ জন্য তাদের কাছে তালিকাও চাওয়া হয়েছে। তবে এবার জোটের একক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।’ বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, অধিকাংশই ‘এক নেতার এক দল’। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও নেই বেশ কয়েকটি দলের। এ অবস্থায় জোটকে সর্বোচ্চ ২০টি পৌরসভা ছাড় দিতে পারে বিএনপি। এর মধ্যে ১০টিতে জামায়াতকে ছাড় দিতে চায়। অন্য শরিক দলকে বাকি ১০টি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। দু-এক দিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে একক প্রার্থী দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। জোটভুক্ত দলগুলো নিজেদের মতো করেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবে। জোটের শরিক দলের নেতারা বলছেন, দরকষাকষি করে যে কয়টি পৌরসভায় নিজেদের প্রার্থী দেওয়া যায়, ততটুকুই লাভ। এ প্রসঙ্গে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘১১টি পৌরসভায় প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। আমি ঢাকার বাইরে। ঢাকায় এসে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’ বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চারটি পৌরসভায় আমরা দলীয় প্রার্থী দিতে চাই। তবে এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো দরকষাকষি করব না। জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন যা বলবেন তা-ই হবে।’ জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা একক প্রার্থী দিতে চাই। এ ক্ষেত্রে যদি আমার দলের প্রার্থীকে সেক্রিফাইজ করতে হয়, তা-ই করব।’ এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমরা চারটি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী দেব। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মনি বলেন, ‘আমার দলের কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির প্রার্থীকেই আমরা সমর্থন দেব।’ জানা যায়, দু-এক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে যাবে বিএনপি। নির্বাচন অন্তত ১৫ দিন পেছানোসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হবে দলটির পক্ষ থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত সময় বাড়ানো না হলে নির্ধারিত তফসিলেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি জোট। নিজ দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গতকাল দিনভর ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিএনপি নেতারা। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গুলশান কার্যালয়ে অফিস করেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলীয় প্রধান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি প্রতিটি পৌরসভার রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৪৭২টি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বেগম জিয়া। গতকাল বিকাল থেকেই প্রতিটি জেলার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কিংবা তাদের প্রতিনিধির কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়। রাতেই সব জেলায় চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে সইৃ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহানকে। গতকাল ছুটির দিনেও তার নেতৃত্বে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেতারা দিনভর কাজ করেন। এর মধ্যে সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, আবদুল আওয়াল খান প্রমুখ নেতাকে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘প্রতিটি জেলায় রিটার্নিং অফিসারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপির জেলার নেতারা চিঠি নিয়ে গেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি পাঠানো হবে। একই সঙ্গে তফসিল পেছানোর জন্য তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

সর্বশেষ খবর