রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভায় ভোটের হাওয়া

প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম আওয়ামী লীগ

আগামীকাল সোমবারের মধ্যে ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনে প্রতিটি পৌরসভার একক মেয়র প্রার্থীর তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। আজকের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা নিশ্চিত করতে হবে জেলা-উপজেলা ও পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। ২৩৪টি পৌরসভার প্রায় প্রতিটিতেই ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে অনড় থাকায় একক প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে শেষ  পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সিলেকশন বোর্ড অথবা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে।  শুধু পৌরসভার মেয়র পদেই নয়, কাউন্সিলর পদগুলোতেও একক প্রার্থী করতে চায় আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, এ জন্য গতকাল বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে জেলা নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল কমপক্ষে ৬৫টি সাংগঠনিক জেলার নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন। তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যে একক মেয়র প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা কেন্দ্রে জমা দিতে বলেছেন। কোনো কারণে আজ জমা দিতে না পারলে আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে পাঠানো বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

সূত্রমতে, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী একক প্রার্থী বাছাইয়ে গতকাল সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, বরগুনা, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, শেরপুর জেলার নেতা ও এমপিরা বৈঠক করেন। তারা মোটামুটি একটি খসড়া তালিকা তৈরিও করেছেন। তবে কোনো কোনো পৌরসভায় আত্মীয়দের প্রার্থী করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গতকাল কুষ্টিয়ায় সদর আসনের এমপি ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কুষ্টিয়া পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। পরে জেলা সভাপতি সদর উদ্দিন খান তার অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে আরেকটি বৈঠক করেন কিন্তু একাধিক প্রার্থী থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে খোকসা পৌরসভায় তার এক আত্মীয়কে প্রার্থী করার অভিযোগ রয়েছে।

সারা দেশে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে বগুড়া জেলার নয়টি, নেত্রকোনার পাঁচটি পৌরসভায় এবার ভোট হচ্ছে। এ দুই জেলার পৌরসভায় একক প্রার্থী বাছাইয়ে গতকাল পর্যন্ত সেখানে কোনো বৈঠক করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। জানা গেছে, একাধিক প্রার্থী থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে নেতাদের। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনি। আজকালের মধ্যেই কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠাব। নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা চাওয়া হয়েছে। আমরাও বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়েছি। প্রার্থীরা সিভি জমা দিলেই আমরা একক প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠাব।

কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নাটোর জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার প্রার্থী করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি ও উপজেলা নেতাদের দায়িত্ব দেন। শুক্রবার রাতে নাটোর পৌরসভার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে শহর ও সদর থানা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল। কিন্তু প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তার ভগ্নিপতি সাজিদুর রহমান বুড়া চৌধুরীকে প্রার্থী করার জন্য প্রভাব খাটান বলে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল কুদ্দুস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলার শীর্ষ নেতা ও এমপিদের নিয়ে বৈঠক করে স্ব স্ব এলাকার এমপিদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। তারা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে জমা দিলে আমি তালিকা কেন্দ্রে পাঠাব। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার দুটি পৌরসভায় (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) ভোটের মাধ্যমে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভায় একক প্রার্থী করা নিয়ে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের। গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের একটি কমিটির সাধারণ সম্পাদক রওশন সারোয়ার সজীর জানান, আমাদের পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি ও সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান হবির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় এমপি ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমান ফকিরের পছন্দের তালিকার অগ্রভাগে রয়েছেন বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলামের নাম। যশোর জেলার ছয়টি পৌরসভায় এবার নির্বাচন হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত জেলা নেতাদের কোনো নির্দেশনা পাননি স্থানীয় পৌরসভা ও উপজেলা নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার দুজন দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। শহিদুল ইসলাম মিলন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামীকাল ৩০ নভেম্বর জেলা-উপজেলা ও পৌরসভার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেয়র পদ প্রত্যাশী অভিযোগ করেন, কেন্দ্র প্রার্থীর তালিকা চাইলেও এখন পর্যন্ত নির্দেশনা নেই জেলা নেতাদের। 

গতকাল সিরাজগঞ্জের ছয় পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু মো. গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বৈঠক করে প্রাথমিক খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছি। আজ সে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে।

সর্বশেষ খবর