রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভায় ভোটের হাওয়া

একক প্রার্থী নির্বাচনে গলদঘর্ম বিএনপি

মাহমুদ আজহার

একক প্রার্থী নির্বাচনে গলদঘর্ম বিএনপি

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে পৌর মেয়র নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান তিনজন। তারা হলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা রিপন তালুকদার, আজমত আলী বাহাদুর ও আলমগীর ঠাকুর। মিরসরাইয়েও লড়ছেন মাইনুদ্দিন লিটন ও দিদারুল আলম নিয়াজী। কেন্দ্রে তাদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। একই অবস্থা বগুড়া সদরেও। পৌর নির্বাচনে দলের প্রার্থী হতে চান জেলা বিএনপির দুই উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান ও আজিজুর রহমান বকুল। এ দুজনের  নামও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। ৩০ ডিসেম্বর ২৩৬ পৌরসভা নির্বাচনের প্রায় সব কটিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী। অনেক এলাকায় জামায়াতসহ জোটের শরিক দলের প্রার্থীও রয়েছেন। জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির এখন প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে গলদঘর্ম অবস্থা। গত তিন দিনেও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন লাগতে পারে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও চার দিন ধরে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত অফিস করছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। একেকটি পৌরসভায় একাধিকবার প্রার্থী বদল করছেন। বিকল্প হিসেবেও রাখছেন প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে বিএনপি। মাঠ পর্যায়ে কোন্দলের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীরা। প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। গত চার দিন দীর্ঘ রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও প্রার্থী তালিকার অর্ধেকও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তা করতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। দলীয় প্রার্থী ছাড়াও জোটকে কিছু ছাড় দিতে হবে। ওইসব এলাকায় শুরু হবে নতুন করে ঝামেলা। এ নিয়ে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিএনপি নেতা আবু আহমেদ জমশেদ ও হাসিন আহমদ চৌধুরী নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বড়লেখায়ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী। বর্তমান মেয়র ফখরুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। বরিশালের বাকেরগঞ্জে এখন পর্যন্ত প্রার্থী তালিকায় দুজন রয়েছেন। তারা হলেন মতিউর রহমান মোল্লা ও রাজীব আহমেদ। একই অবস্থা যশোরের  কেশবপুরে। পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির বর্তমান মেয়র আবদুস সামাদ বিশ্বাস ও মশিয়ার রহমানের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় ১৩টি পৌর নির্বাচনের সব কটিতেই একাধিক প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগেও। তবে কেন্দ্রে সব প্রার্থী তালিকা চলে এসেছে। এখন সব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য অনেক প্রার্থীকে নির্বাচনের বাইরে অন্য লোভনীয় প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির একাধিক প্রার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, দলের প্রার্থী হতে না পারলে স্বতন্ত্র হিসেবেই লড়বেন।

জানা গেছে, নির্বাচন ১৫ দিন পেছানোসহ আজ বেশ কয়েকটি শর্ত নিয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে। দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন। তার সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত সাবেক সচিবরাও যেতে পারেন। অবশ্য দাবি-দাওয়া না মানলেও ঘোষিত তফসিলেও নির্বাচনে যাবে দলটি। কমিশনকে চাপে রাখতেই এ ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, নির্বাচনের কৌশল হিসেবেই একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনতে বলা হচ্ছে। কোনো কারণে প্রথম পছন্দ বাদ পড়লে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় জনকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে আগের চেয়ে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিএনপির আগ্রহ কম বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহানকে দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অনুলিপিগুলোতে মো. শাহজাহানের একটি নমুনা স্বাক্ষর রয়েছে। আর তা সত্যায়িত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। কৌশলগত কারণে অনেক পৌরসভায় একাধিক প্রার্থী রাখা হচ্ছে। তবে প্রার্থীদের মধ্যে এবার আগ্রহ অনেক কম। কারণ জিতলেও সমস্যা, না জিতলেও সমস্যা। প্রার্থী হওয়া মানেই নতুন নতুন মামলা, হয়রানি। জোটের শরিক দলগুলোও তাদের প্রার্থী তালিকা দিচ্ছে। খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’

সর্বশেষ খবর