সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এখনো অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে পুলিশ

সাখাওয়ত কাওসার

এখনো অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে পুলিশ

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা ও একই দিনে লালমাটিয়ায় তিন প্রকাশকের ওপর হামলা ঘটনার জট খোলেনি। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক মাস। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কেবলই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তাদের তদন্ত কাজ চলছে।

অন্যদিকে অনেকটা নীরবেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন হামলায় আহত শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লেখক-ব্লগার রণদীপম বসু ছাড়াও অনেকে।

গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর ও শাহবাগের আজিজ মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শাহবাগ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুটি মামলাই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। দীপন হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি দ্রুততর সময়ের মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে হামলা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান জানান, হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও গুপ্তচর লাগিয়ে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঘটনার আগের এবং পরের দিনসহ তিন দিনে সন্দেহজনক প্রায় এক লাখ কল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর বাইরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও একটি ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পৃথক গ্রুপ দুই প্রকাশনা কার্যালয়ে হামলা চালালেও তাদের নির্দেশদাতা একই ব্যক্তি। এ কারণে যে কোনো একটি গ্রুপের কাউকে শনাক্ত করতে পারলে অপর হামলাকারী গ্রুপটিও শনাক্ত করা যাবে। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সামনে রেখে মামলার তদন্ত কাজ চলছে। আনসারুল্লাহর বিভিন্ন স্লিপার সেলের সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব অন্তত ছয়জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে। এখন তাদের পরিচয় উদঘাটনের কাজ চলছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায়ই র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে। দীপন হত্যাকাণ্ড এবং একই দিনে প্রকাশকদের ওপর হামলার ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ওই দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এর বিশ্লেষণ ছাড়াও এ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজ চলছে।

দেশ ছাড়লেন টুটুল, রণদীপম বসুও ছাড়বেন : হামলার শিকার প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিজ বাসায় ফেরেন। এর দুদিনের মাথায় অনেকটা গোপনেই তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। টুটুলের ঘনিষ্ঠ এক প্রকাশক শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান জানান, টুটুল দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে গেছেন। টুটুলের ঘনিষ্ঠ আরেক লেখক বন্ধু জানান, টুটুল হাসপাতালেও প্রতিটা মুহূর্তে আতঙ্কে ছিলেন। ঘাতকরা তাকে আবারও হত্যা চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। এ কারণে হাসপাতাল ছাড়ার দুদিনের মাথায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তার স্ত্রী-সন্তান এখনো দেশে রয়েছেন। তাদের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। টুটুলের এই লেখক বন্ধু আরও জানান, রণদীপমও দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে কাটছে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারছেন না তিনি। বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, ধারবাহিকভাবে খুন, হামলা আর হুমকিতে থাকা ব্লগার-প্রকাশক-লেখকদের অনেকেই গোপনে দেশ ছাড়ছেন। এরই মধ্যে হুমকি পাওয়ার পর সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। হুমকি পাওয়ার পর ২৮ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন ব্লগার শাম্মী হক। তিনিও সম্প্রতি গোপনে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন।

তারেক এখনো হাসপাতালে : শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে হামলার শিকার প্রকৌশলী ও ব্লগার তারেক রহিম এখনো ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল হাসপাতালের ১৬ নম্বর কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ঘুমাচ্ছেন। কেবিনের সামনে প্রহরায় রয়েছে দুই পুলিশ সদস্য। তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে তার বাম হাতে আরও একটি অস্ত্রোপচার করাতে হবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই ইমরান। দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপ ঠেকাতে গেলে তার হাতের আঙ্গুলে অন্তত ৬টি কোপ পড়েছিল। তারেকের আরেক ভাই আদেল জানান, তারা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। দুর্বৃত্তরা তারেকের ওপর আবারও হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর