শিরোনাম
সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আচরণবিধি মানতে মন্ত্রী এমপিদের চিঠি তিনজনকে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল রাতে কমিশন সচিবালয় থেকে সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে পৃথক দুটি চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তিনজন সংসদ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ছয়জন সংসদ সদস্যের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কমিশন সচিবালয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনজন এমপিকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা আচরণবিধি লংঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার যেসব সংসদ সদস্য আচরণবিধি লংঘন করে নির্বাচনী এলাকায় গেছেন এবং আগাম প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেক, নাটোর-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। কারণ দর্শানোর নোটিশে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের উল্লেখ করে আচরণবিধি লংঘনের বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এ তিনজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিধি লংঘন করে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে উপস্থিত থাকা, আগাম প্রচারণা চালানো ও নির্বাচনী কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ তিনজনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের দায়ে বিধি মোতাবেক কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে চিঠি প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে প্রচারণায় অংশ না নেন, সেই বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছে কমিশন। পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৫ এর ২২ ধারা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উলি­খিত ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়র বুঝানো হয়েছে। স্পিকারের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সংসদ সচিবালয়ের সচিব ইসির চিঠির বিষয়টি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অবহিত করবেন। ইসিতে অব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ : দেশের ২৩৫ পৌরসভায় দলভিত্তিক ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে তথ্য সংগ্রহে অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে, যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৫৫ ঘণ্টা পরও শুধু মেয়র পদে কয়টি দল প্রার্থী দিয়েছে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়জন তা নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এমনকি যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি ইসি। সিংগাইরে পৌরসভায়, পবা উপজেলায় ভোট স্থগিত : আদালতের আদেশে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভায় ও রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল কমিশনের আইন শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব অন্তরা বিশ্বাস এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনায় পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন এবং সিংগাইর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পৌর নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ২৩৬টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও সিংগাইরের আগে আদালতের আদেশে মংলা পৌরসভার ভোট স্থগিত হওয়ায় এখন ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। অন্যদিকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মোকবুল হুসাইনের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হলে ১৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৮ ডিসেম্বর এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে তিন দিন : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল গতকাল। এর মধ্যে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা জমা দেওয়ার দিন থেকে ?পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে প্রার্থিতা পেতে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি জানান। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, যাদের মনোনয়নপত্র শনিবার (৫ ডিসেম্বর) বাছাই হয়েছে, তারা মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। আর যাদের মনোনয়নপত্র রবিবার বাছাই হয়েছে তারা বুধবার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত আপিল দায়ের করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কারও মনোনয়নপত্র বাতিল বা জমার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন প্রার্থী বা ব্যক্তি। আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ করা হয়েছে। তারা আপিল দায়েরের তিন দিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন।

সর্বশেষ খবর