বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্নীতি দমনে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি -ইফতেখারুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমনে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি -ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। তবে এখনো দুর্নীতিবিরোধী আইনি কাঠামো ও নীতিমালা বাস্তবায়নে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। দুর্নীতি দমনে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ‘জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য-দুর্নীতি রুখবেই’ শীর্ষক এক দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসকে প্রতিবছর সরকারিভাবে উদযাপনের আহ্বান জানান। মানববন্ধনে টিএসসির পরিচালক আলমগীর হোসেন, টিআইবির সদস্য ডা. নুরুল ইসলামসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্য, টিআইবি কর্মী, সমমনা সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি কাঠামো, নীতিমালা ও দুর্নীতিবিরোধী কৌশল সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। পাশাপাশি আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) আরও বেশি সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই। কারণ দুদকের কার্যকারিতার বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, দুদক একা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দুর্নীতি রোধ করতে সরকার, প্রশাসন, জাতীয় সংসদসহ আরও যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোরও সম্পূরক ভূমিকা পালন করতে হবে। দুদকের কর্মীদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অপসারণ করে দুদকের নেতৃত্ব পর‌্যায় থেকে শুরু করে কর্মী পর‌্যায়ে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সেটি করতে পারলে দুদকের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া আছে তা পালন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ থাকবে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক চাপ বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ থাকে। এটার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তা সত্ত্বেও দুদকের যে আইনি এখতিয়ার রয়েছে তা দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি আরও অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং সক্রিয় হতে পারে। ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস’ সরকারিভাবে পালনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে আমরা সার্বিকভাবে লক্ষ করি আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোতে সরকার এবং সরকার পরিচালিত বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি আগের তুলনায় অনেক সুদৃঢ় হয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আগের মতো ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করে না। তার থেকে সরে এসে আমরা অগ্রগতি লাভ করেছি। যদিও আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য, দুর্নীতিকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সক্রিয় এবং কার্যকর কর্মপন্থা নির্ণয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ গৃহীত হয়। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর মেক্সিকোর মেরিডায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী ১২৯টি দেশের মধ্যে ৮৭টি দেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষর প্রদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা তৈরিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারণ জনগণের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে এই সনদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিতকরণ। এ লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে টিআইবির উদ্যোগে বাংলাদেশে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। দিবসটি উদযাপনে এ বছর টিআইবি আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান, আলোচনা অনুষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা এবং প্রদর্শনী ও দুর্নীতিবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।

সর্বশেষ খবর