মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অভিনব কায়দায় প্রার্থী কেনাবেচা

বিধি লঙ্ঘন : আরও মন্ত্রী এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিধি লঙ্ঘন : আরও মন্ত্রী এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির চিঠি

পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আরও এক মন্ত্রী, তিন এমপি ও প্রার্থীসহ অন্তত ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ইসি সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এদিকে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন সরকারদলীয় তিন সংসদ সদস্য। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না— তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) প্রতি কারণ দর্শানোর শোকজ নোটিস দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে চার ওসির বিষয়ে তদন্ত করছে ইসি।

ইসি জানিয়েছে, সরকারদলীয় তিনজন সংসদ সদস্য ও কয়েকজন প্রার্থীর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সুযোগে নির্বাচনী প্রচারণা করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে রয়েছেন— একজন মন্ত্রী, রংপুর-২ আসনের এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক ও ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনসহ তিন এমপি। তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দিবসে প্রচারণার অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এ ছাড়া সরকারদলীয় আরও কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধেও বিজয় দিবসের দিনে প্রচারণার অভিযোগ ছিল। কমিশন কর্মকর্তারা জানান, এসব ঘটনা খতিয়ে দেখে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাহেরপুর, বড়াইগ্রাম, কলাপাড়া, মুক্তাগাছা, রায়গঞ্জ, খোকসা, সিরাজগঞ্জ, বদরগঞ্জ, নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ, দাগনভূঞা, ফেনী, পরশুরাম, বরগুনা সদর ও শেরপুর পৌরসভায় প্রচারণায় বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না— তার কারণ দর্শানোর জন্য ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেক, নাটোর-২ আসনের মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে নোটিস দিয়েছিল কমিশন। এর জবাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে বর্ণনা করে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সরকারদলীয় এ তিনজন সংসদ সদস্য। ভবিষ্যতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন তারা। এ জন্য তাদের সতর্ক করে দিয়ে দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ইসি।

বরগুনায় রিটার্নিং অফিসার, পুলিশসহ পাঁচজনকে শোকজ ইসির : বরগুনা পৌরসভায় দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপারসহ পাঁচজনকে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য ‘কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’ জানতে চেয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ইসির উপসচিব সামসুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বরগুনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সাহাদাত হোসেনের উঠান বৈঠকে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ যুবলীগের জেলা সভাপতিও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দুই প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের শোকজ করা হয়েছে বলে জানান ইসির এ উপসচিব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল-শোডাউনে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এরপর সংঘর্ষের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে রিটার্নিং অফিসার, এসপি, ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন প্রার্থী সাহাদাত।

ইসির উপসচিব সামসুল আলম বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তিন দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক), এসপি, ওসি, দুই প্রার্থী সাহাদাত হোসেন ও কামরুল আহসানকে আলাদা আলাদা নোটিস পাঠানো হয়েছে।

চার ওসির বিষয়ে তদন্ত : পৌর নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগে ঈশ্বরগঞ্জ, হাতিয়া, সাতকানিয়া ও জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান ইসির দায়িত্বশীল জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের মতলব (উত্তর), কালকিনি ও কুলাউড়া পৌরসভায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তিন ওসিকে প্রত্যাহারও করেছে ইসি।

চাটখিল নিয়ে ফের অভিযোগ : চাটখিল পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত হওয়ার পর নতুন করে অভিযোগ দিয়েছেন প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, তদন্তের সময় আমি ও প্রার্থী উপস্থিত না থাকলেও প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম। এখন এ বিষয়ে বক্তব্যটি ইসিতে জমা দিয়েছি।

ব্যালট জটিলতায় ইসি : পৌর ভোটের আর আর আট দিন বাকি। আজ ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট পেপার ছাপানো শেষ করার কর্মপরিকল্পনা ছিল নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু আজকের মধ্যে সব ছাপানো শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন ইসির কর্মকর্তারা। বিভিন্ন পৌরসভায় নতুন নতুন প্রার্থী যোগ হওয়ায় ব্যালট ছাপানো জটিলতায় পড়েছে ইসি। এ জন্য বেশ কিছু প্রার্থীর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আইনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, প্রার্থী তালিকা বেড়েছে। এ জন্য ব্যালটসহ অনেক বিষয়ে সমস্যায় পড়েছি। এ বিষয়ে আমরা আইনি লড়াই করব।

গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য, সমর্থন তালিকার স্বাক্ষরে ভুলসহ নানা ত্রুটিতে হাজারখানেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল, যাদের অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট পেপার ছাপানো শুরু হয়। ২৩৪ পৌরসভার সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বেশির ভাগ ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে গেছে। মেয়র পদের নাম ও প্রতীক দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো চলছে। তবে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কিছু পৌরসভার ব্যালট পেপার ছাপানো বন্ধ রয়েছে বলে জানান ব্যালট পেপার মুদ্রণের তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা। ইসির আইন শাখা জানায়, এ পর্যন্ত ১৯৪ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর