মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে : খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে : খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। বলা হয়, এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। আসলে কত লোক শহীদ হয়েছে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হলে সেনা মোতায়েন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা তা করবেন না। কারণ তার দলীয় পুলিশ বাহিনী রয়েছে। তবে পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যই খারাপ এটা আমরা বলব না। কারণ অনেক দেশপ্রেমিক ও ভালো মানুষও রয়েছে এতে। কিন্তু তারা চাকরি ও পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা করে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ সময় দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সরকারের ষড়যন্ত্র এবং বর্তমান ‘অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন’ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, শফিউজ্জামান খোকন, সাদিক খান, ফজলুল হক মিলন, প্রজন্ম দলের সভাপতি শামা ওবায়েদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা নেতারা বক্তব্য রাখেন। বেগম খালেদা জিয়া সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিট থেকে ৬টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টানা পঞ্চাশ মিনিটের বক্তৃতায় বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষের ওপর যারা অত্যাচার করেছে আমরাও সেই সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক। তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নয়। আওয়ামী লীগ নিজেদের ঘরে মুক্তিযোদ্ধার নামে রাজাকার পুষছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করেছে। তাই তাদেরও বিচার করতে হবে বলে আমরা দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এসব রাজাকারের তারা কোনো বিচার করছে না। সরিষাবাড়ীর রাজাকার মাওলানা নূরুল ইসলামকে জাতীয় পতাকা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগই তাদের ঘরের ভিতরের যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকার আত্মীয়স্বজনকে মন্ত্রী বানিয়েছে। এই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মুক্তযোদ্ধারা সঠিক সম্মান পায় না। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষমতায় গেলে এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেতারা প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে এসেছেন। তারা দেখে এসেছেন যে, সারা দেশের মানুষ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা বলছেন, অনেক দিন হলো— তারা ভোট দিতে পারেননি। এবার সুযোগ পেলেই তারা ধানের শীষে ভোট দেবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থীরা শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পাবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে যে লোক বসে আছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে, আর নির্বাচন কমিশন গিয়ে অসহায়ের মতো প্রধানমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বসে আছেন। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষকে পৌর নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

ছয় বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কার : দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ছয় বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— দলের স্বার্থবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত থাকার কারণে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌর বিএনপির সভাপতি নূরুল আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, রাজশাহীর চারঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি মো. কামরুদ্দিন সরদার, আড়ানী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম মাস্টার, নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সানোয়ার হোসেন সজীবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেলের আহ্বায়ক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব মো. শাহজাহান, সদস্য রুহুল কবির রিজভীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের পৌর নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বিভাগীয় মনিটরিং সেলের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সংশ্লিষ্ট এলাকায় সফর করছেন। কেন্দ্রীয় সেলের প্রধান মির্জা ফখরুল দু-এক দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ সফর করবেন। সদস্য সচিব মো. শাহজাহান গতকাল চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর দাগনভূঞা ও পশুরহাটের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমীরুল ইসলাম খান আলীম, মাহবুবুর রহমান শামীম, যুবদল নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ সংশ্লিষ্ট এলাকায় সফর করছেন।

মির্জা ফখরুলের নিন্দা : কুমিল্লার চান্দিনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক ও মেয়র প্রার্থীর ওপর ককটেল হামলার নিন্দা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে অবিলম্বে ককটেল হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর