মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাড়ছে নারী ধূমপায়ী

জিন্নাতুন নূর

বাড়ছে নারী ধূমপায়ী

বাংলাদেশে শুধু পুরুষ ধূমপায়ীর জন্যই যে সিগারেট কোম্পানিগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য করছে এ কথা ঠিক নয়। নারী ধূমপায়ীদেরও এখন তারা বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমনকি নারীকে ধূমপানে আসক্ত করতে বাজারে আনা হচ্ছে নতুন সিগারেটও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সিগারেটের দোকানগুলোতে এখন শুধু নারী বিক্রেতাদের জন্য বিশেষ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে নারীদের ধূমপানে আসক্ত করতে ব্যবসায়ীরা বাজারে এনেছেন ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট। বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, দেশে মোট নারীর দুই কোটিরও কিছু বেশি ধূমপানে আসক্ত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও জানান, দেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ নারী তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যান। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে আগত নারী রোগীদের অনেকেই আছেন যারা ধূমপানের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত। তবে নারী ধূমপায়ীরা সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন।

বাংলাদেশে কর্মরত একটি বিদেশি সিগারেট কোম্পানির এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশের মোট পূর্ণ বয়স্ক জনস্যংখ্যার অর্ধেকই ধূমপানে আসক্ত। আর এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই নারী ধূমপায়ী। সামাজিকতা ও আর্থিক কারণে এ দেশে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা ধূমপানে আসক্ত না হলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা ধূমপানে আসক্ত হন বেশি। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন পার্টি, কনসার্টসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমনভাবে পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে যেখানে মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে ধূমপান করতে পারেন। ফলে এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে ও তরুণীদের দলে দলে ধূমপান করতে দেখা যায়। নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তামাকজাত পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের চেয়ে এখন মেয়েদের ধূমপানে আসক্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। তারা আগে সিগারেট কিনতে নিজেদের ছেলেবন্ধু, গৃহকর্মী, ভাই বা অন্য কারও সাহায্য নিলেও এখন নিজেরাই সরাসরি বিক্রেতার কাছ থেকে সিগারেট কিনছেন। বিক্রেতারা আরও জানান, ‘মোর’, ‘মালবোরো গ্লোড’, ‘ইজি লাইট’, ‘গুদাম গারাম’ ও ‘ব্ল্যাক’সহ আরও বেশ কিছু ফ্লেভারযুক্ত কম নিকোটিনের সিগারেটের ভালো চাহিদা আছে নারী ক্রেতাদের কাছে। এসব সিগারেটে পুদিনা, লবঙ্গ ও দারুচিনিসহ বিভিন্ন ভেষজের গন্ধের মিশ্রণ ব্যবহূত হয়। তবে এগুলোর বাইরেও উচ্চ নিকোটিনযুক্ত সিগারেটে আসক্ত হন নারী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরুণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ইয়াবা সেবন ও অ্যালকোহল পান করতে গিয়ে সিগারেট সেবন করছেন। যা পরবর্তীতে আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে। উত্তরার লাইট হাউস নামক এক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. জসিম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাদকাসক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে কৈশোরে প্রথমে দু-একটি সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও ক্রমেই সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কিশোরী ও তরুণীরা হালকা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন। পরে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে শুরু হয় ‘হার্ড কোর ড্রাগ’  সেবন। সে সময় একজন মাদকসেবী ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি সেবন করতে শুরু করেন। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণের প্রাপ্ত তথ্যে, ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের বয়স ১০ বছর বা তার বেশি, তাদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষই কোনো না কোনো সময়ে ধূমপান করেছেন এবং গবেষণা চলাকালেও ধূমপান চালিয়ে যাচ্ছিলেন এমন রোগীর হার ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর নারীদের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং : এদিকে আধুনিক তরুণীরা এখন ধোঁয়াবিহীন ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রনিক সিগারেট তথা ই-সিগারেটের প্রতিও আসক্ত হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে বিষাক্ত তামাক সেবনের বদলে আসক্তরা বাষ্পে পরিণত হওয়া তরল নিকোটিন গ্রহণ করে। এটি ‘ভ্যাপিং’  নামেও পরিচিত। এর ফলে মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতি তৈরি হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে নিকোটিন সেবনও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে রয়েছে জীবাণুনাশক ফরমালডিহাইড, যাতে ক্যানসার তৈরির উপাদান রয়েছে। বনানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, বন্ধুদের দেখাদেখি তিনি ভ্যাপিং শুরু করেন। এখন তিনি এতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ধোঁয়া তৈরি না হওয়ায় তিনি তার ঘরেও নিয়মিত ভ্যাপিং করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর