মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংঘাত এড়াতে সেনা মোতায়েন জরুরি

জিন্নাতুন নূর

সংঘাত এড়াতে সেনা মোতায়েন জরুরি

মুনিরা খান

আসন্ন পৌর নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েন প্রয়োজন। এ নির্বাচনে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতিই জনগণ ও প্রার্থীদের আস্থা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে প্রচুর ক্ষমতা আছে। প্রতিষ্ঠানটি  চাইলেই নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করার ক্ষমতা রাখে। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সংঘর্ষ হচ্ছে তা আর বাড়তে না দিয়ে সেনা মোতায়েন করাই উচিত হবে। এর ফলে দেশের ভিতর অযথা যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে তাও এড়ানো সম্ভব। ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে আসন্ন পৌর নির্বাচন নিয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। ফেমার সভাপতি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার এখন আর মাত্র কয়েকটি দিন আছে, আর নির্বাচন কমিশন যদি দেশে নির্বাচনী সংঘাত আর বাড়তে দিতে না চায় সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিই দেশের পরিবেশ সুশৃঙ্খল করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে আরেকটু সময়ের প্রয়োজন ছিল। এটা যদি হঠাৎ করে অল্প সময়ের মধ্যে না হয়ে আরেকটু আলোচনা করে হতো এবং তৃণমূল পর্যায়ের লোকজনকেও নির্বাচন বিষয়ে বোঝার জন্য সময় দেওয়া হতো তাহলে নির্বাচন আরেকটু ভালোভাবে হতো। মুনিরা খান বলেন, হঠাৎ করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। যদি আগে থেকেই এ বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকত তবে এমন হতো না। সময় নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দলগুলোও মানসিকভাবে তৈরি থাকত। আমি মনে করি, তৃণমূলে অনেকেই নিজেদের মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য তৈরি করছিলেন। তাদের অনেকেই হতাশ হয়েছেন কারণ আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না, তাদের নিজেদের দলের কাছেও যেতে হয়েছে। এতে অনেকেই আশা ভঙ্গের কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। এক্ষেত্রে দলগুলোও যদি তাদের প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় পেত, প্রার্থীদের প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেত এবং দলীয় নির্দেশনার ব্যাপারে প্রার্থীদের জানাত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু এসব বিষয়ের জন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন। দলগুলোও সেই কাঙ্ক্ষিত সময় পায়নি। আমার মতে দলগুলো পর্যাপ্ত সময় পেলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটত না। এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, ২০০৪ সালে সর্বশেষ যখন পৌরসভা নির্বাচন শেষবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন ফেমা প্রতিটি নির্বাচনী স্টেশনে (১২৫টি কেন্দ্র) পর্যবেক্ষক রেখে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছিল। তখন নির্বাচন দেখে আমরা বলেছিলাম যে, তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেবার আমরা সুপারিশ করেছিলাম যে, ‘সমর্থিত’ শব্দটি বাদ দিয়ে সব নির্বাচন যদি দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয় তবে জনগণের মধ্যে দ্বিধা থাকবে না। ২০০০ সালে ফেমা ‘স্ট্রেনথেনিং ডেমোক্রেসি ইলেকট্রোরাল প্রসেস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার করেছিল। সেখানেও আমাদের এ ধরনের সুপারিশ ছিল। সেখানে স্থানীয় নির্বাচনেও যেন দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। গণতন্ত্র্রকে তৃণমূল পর্যায় পৌঁছে দেওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোও যেন তার প্রার্থীকে ভালোভাবে তৈরি করে। আমাদের সেই সুপারিশ ছিল। নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে ইসিতে লোক নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমি মনে করি নির্বাচন হওয়ার আগে থেকেই ইসি যদি কঠিন ভূমিকা নিয়ে দায়িত্ব পালন না করে সেক্ষেত্রে ইসি নিজেদের লোক দিয়েও খুব একটা ভালো ফল পাবে বিষয়টি এমন নয়। এক্ষেত্রে ইসির যদি নির্বাচনের আগে প্রস্তুতি না থাকে তখন কোনো বিষয়ে অভিযোগ এলে তার তদন্ত করা মুশকিল হয়ে পড়ে। যখন অনেক বেশি অভিযোগ আসে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত তদন্তকারী না থাকলে সেই তদন্ত চট করে করা সম্ভব নয়। এখানে আমি বলব ইসির প্রশাসনিক জনবল আরও বেশি পরিমাণে থাকা উচিত ছিল। একইসঙ্গে নির্বাচন যে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে সে সম্পর্কে জনগণের মনে আস্থা তৈরির জন্য যেই অভিযোগই আসুক না কেন তার দ্রুত তদন্ত করতে হবে। আর যারা এই অভিযোগ করছেন তাদেরও জানিয়ে দিতে হবে যে ইসি তাদের করা অভিযোগ আমলে নিয়ে তার তদন্ত করেছে। আর তা না করলে কিন্তু জনগণের নির্বাচনের বিষয়ে আর আস্থা থাকবে না। আমি মনে করি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আরও বেশি লোকের প্রয়োজন আছে। তবে ইসি যে ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্ত করছে না এমন নয়, আমার মনে হয় তাদের লোকবলের অভাব আছে। আর যদি লোকবলের অভাব হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমি ধরে নিলাম যে, তাদের সদিচ্ছা আছে, হয়তো লোকবলের অভাবের কারণেই তারা প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করতে পারছে না। নির্বাচনে টাকার অপব্যবহার সম্পর্কে মুনিরা খান বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে গিয়ে দেখেছি ‘ইউজ অব মানি’ একটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে দেয় না। এটা একটি বড় ফ্যাক্টর। আমি মনে করি এ বিষয়ে ইসির কাজ করা উচিত ছিল। পৌর নির্বাচনের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব সম্পর্কে মুনিরা খান বলেন, এ নির্বাচনে যদি টাকার প্রবাহ থাকে, এ নির্বাচন যদি প্রভাব খাটিয়ে হয়, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয় তাহলে রাজনৈতিক প্রভাব বিরূপভাবে পড়বে। কারণ আমরা যে শিক্ষা দিতে চাই সেখানে তৃণমূল থেকে আমরা গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চাই। আর যদি তা না হয় তবে আমরা বাংলাদেশে যে ধরনের গণতন্ত্র চাই, রাজনৈতিক দলগুলোকে যেভাবে সুচারুভাবে গড়ে তুলতে চাই সে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। আর যদি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তবে সব দল ও তাদের কর্মীদের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা তৈরি হবে। আমি মনে করি ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভোটারদের সম্পূর্ণ আস্থা থাকা দরকার। যদি তা না থাকে তবে রাজনৈতিকভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার যে প্রচেষ্টা তা সফল হবে না।

সর্বশেষ খবর