রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভা নির্বাচন

মাঠে ২০২৯ সন্ত্রাসী, নেপথ্যে ৬৩৭ গডফাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাঠে ২০২৯ সন্ত্রাসী, নেপথ্যে ৬৩৭ গডফাদার

পৌরসভা নির্বাচনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী-ক্যাডার। সন্ত্রাসী-ক্যাডারের তালিকায় বিএনপির ১ হাজার ১২১, আওয়ামী লীগের ৫৬১ ও জামায়াত-শিবিরের ২১১ জন। এরা পাইপগান, রিভলবার, বন্দুক, শুটারগান, পিস্তল, কাটা-রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এদের নেপথ্যে আশ্রয়দাতা ও গডফাদার হিসেবে রয়েছেন ৬৩৭ জন। আজ-কালের মধ্যে সন্ত্রাসী-অস্ত্রবাজদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এসব ক্যাডার-সন্ত্রাসীর তালিকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসী, গডফাদার ও আশ্রয়দাতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের আটক করতে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ তালিকা নির্বাচন কমিশনেও পৌঁছে দিয়েছে। সংস্থাটির  পরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দুই পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ও ২০৪ পৃষ্ঠার তালিকা সংযুক্ত করে দিয়েছেন। সক্রিয় সন্ত্রাসী, গডফাদার ও আশ্রয়দাতাদের নাম, ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে তাতে। তাদের গ্রেফতারে শিগগির অভিযানের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে— পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণার সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডাররা সক্রিয় রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পৌর নির্বাচনের আগে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সক্রিয় সন্ত্রাসী-ক্যাডারের সংখ্যা ২ হাজার ২৯ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৬১ জন, বিএনপি ১ হাজার ১২১ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, জামায়াত-শিবিরের ২১১ জন, পিসিপি ১ জন, জেএসএস ১০ জন ও অন্যান্য ১২১ জন। সক্রিয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা ও গডফাদারদের সংখ্যা ৬৩৭ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১১ জন, বিএনপি ৩১২ জন, জামায়াত-শিবির ৭৭ জন, পিসিপি ১ জন, জেএসএস ১ জন ও অন্যান্য ৩৫ জন জড়িত রয়েছে।  সক্রিয় সন্ত্রাসীরা সাধারণ জনগণকে ভয়ভীতির মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে গোয়েন্দা সংস্থাটি জানায়, সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখায়। পাইপগান, রিভলবার, বন্দুক, শুটারগান, পিস্তল, কাটা রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার বিকালে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব এ তালিকা গ্রহণ করেন। ২৩৩ পৌর নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামার আগেই এ তালিকা এলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খানের হাতে। এদিকে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, এপিবিএন ও সংশ্লিষ্ট সদস্যরা। আগামী বুধবার পৌর ভোট হবে। এর আগে সোমবার থেকে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতিমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সন্ত্রাসী-চিহ্নিত অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিভাগ, জেলা ও উপজেলাওয়ারি এ তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। যাতে করে পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামলে নিয়মিত ব্যবস্থার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অভিযান করবে বলেন একজন উপ-সচিব।

বোমাবাজি ও কেন্দ্র দখলের শঙ্কা : স্থানীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডাররা বোমাবাজি, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোটের দিন কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোটকেন্দ্রে বাধা  দেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। বলা হয়েছে—তারা সক্রিয় থাকলে সহিংসতা ও প্রাণহানির শঙ্কা বাড়বে। সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী ক্যাডারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটদানে বাধা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

অভিযানের সুপারিশ : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের আটক করতে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা যাতে কেন্দ্র দখল করতে না পারে প্রশাসন, পুলিশ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে বলেও প্রস্তাব রাখা হয়েছে সুপারিশে। সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের মদদদাতার ও গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর