সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা, মাঠে থাকছে বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আজ মাঠে নামছে বিজিবি-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে টহলে থাকবে। এ ছাড়া র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি এবারে  পৌরসভার ভোটার অনুপাতে ২২৯টিতে বিজিবি এবং ছয়টিতে কোস্টগার্ড মোতায়েনও থাকবে। এ নির্বাচনে  সেনা মোতায়েনে বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আবেদনে ইসি সাড়া না দিয়ে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য বাড়ানোর কথা বলেছিল। এদিকে জঙ্গি তত্পরতার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে পৌরসভার ভোটে রংপুর ও রাজশাহী  বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র সচিবের পাঠানো ভেটিং করা পরিপত্রে কমিশনের নির্দেশনাগুলোই বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন তা অনুমোদনও করেছে। এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে— সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তত্পরতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন সমাবেশ, পথসভা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি তত্পরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও তত্পর হতে হবে। নির্দেশনায় সংখ্যালঘু  ভোটারদের নিরাপত্তা ও ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে এবং বহিরাগতদের সমাগম বন্ধে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করতে বলা হয়েছে। ভোটের প্রচার শেষ হচ্ছে আজ  সোমবার রাত ১২টায়; দুই দিন অপেক্ষার পর ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভার সাড়ে তিন হাজার কেন্দ্রে  ভোটগ্রহণ হবে। এসব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকছে ৭০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা সদস্য। এ ছাড়াও স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহলে থাকবে। কমিশনের উপসচিব সামসুল আলম বলেন, পৌরসভাগুলোতে ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে, প্রচারণাও শেষ পর্যায়ে। ভোটের জন্য অপেক্ষমাণ জনগণকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিতে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে আইনশৃঙ্খলা সভার সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। গত ১৯ ডিসেম্বর  পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সভা করে নির্বাচন কমিশন।

উত্তরবঙ্গে ‘জঙ্গি তত্পরতা’ নিয়ে উদ্বেগ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা জঙ্গি হামলার বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ  দেন। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে— এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ‘থ্রেট’ হলো— সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গি তত্পরতা। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে উত্তেজনা বাড়বে এবং কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাও সৃষ্টি হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ ছাড়া এখন পরিস্থিতি ভালো হলেও দলীয় অন্তর্কোন্দলে সহিংসতা বাড়তে পারে। কালো টাকা, পলাতক আসামি ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বাড়তে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে। অতীতে  ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভায় বলেন, এজন্য ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি আমাদের ব্যর্থতা।

বহিরাগত অবস্থান ও অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ : আজ ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ থাকবে ওই পরিপত্রে। সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেফতার ও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন ও পুলিশ। ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী চার দিন বৈধ লাইসেন্সধারীদেরও অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে।

২২৯ পৌরসভায় থাকবে বিজিবি, ৬টিতে কোস্টগার্ড : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার অনুপাতে ২২৯টিতে বিজিবি এবং ৬টিতে কোস্টগার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটের দুই দিন আগে গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ সংক্রান্ত চিঠি বিশেষ বাহক মারফত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিপত্রও জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব নির্বাচনী এলাকায় আজ ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। ভোটের দিন সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন সদস্য থাকবে। ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছে। ভোটার অনুযায়ী ২২৯ পৌরসভায় এক প্লাটুনের কম-বেশি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে। যেভাবে চাওয়া হয়েছে, সেভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য  মোতায়েন করা হচ্ছে। যে খসড়া পরিকল্পনা ইসি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি দেওয়ায় পরিপত্র সেভাবেই জারি হয়েছে বলেন ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম। ১০২ পৌরসভায় ১০২ প্লাটুন বিজিবির কথা বলা হলেও এখন ২২৯ পৌরসভায় কম-বেশি মোতায়েন করা হচ্ছে। এতে সব মিলিয়ে বিজিবির সংখ্যা একই থাকবে। বিজিবির একজন সদস্য জানান, প্রতি প্লাটুনে ৩০-৩৩ জন করে সদস্য থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ছয় উপকূলীয় পৌরসভা— মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, রামগতি ও পাথরঘাটায় কোস্টগার্ড থাকবে। বাকি ২২৯ পৌরসভায় ভোটার অনুপাতে বিজিবি  মোতায়েন হবে।

দুই এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ : ইসির একজন উপ-সচিব জানান, প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে বরগুনা ও নড়াইলের সরকারদলীয় দুই এমপিকে দ্রুত নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি  দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে কুলাউড়া  পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিমকে ডাকবাংলো ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসি।

আরও দুই ওসি প্রত্যাহার : ভোটের দুই দিন আগে পক্ষপাত ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে জগন্নাথপুরের ওসি আসাদুজ্জামান ও হাতিয়ার ওসি নুরুল হুদাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিজানুর রহমান। এক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাহার করে উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ পর্যন্ত কমিশন কুলাউড়া, কালকিনি, মতলব উত্তর, সাতকানিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার করেছে।

বগুড়ায় ১৭৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৫টি ঝুঁকিপূর্ণ

বগুড়া থেকে আব্দুর রহমান টুলু জানান, ৩০ ডিসেম্বর বগুড়ার ৯ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখবে বগুড়া। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি, র‌্যাব ও ২টি পৌরসভায় বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।

সর্বশেষ খবর