রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
দিল্লির চিঠি

ফুলেল ভবিষ্যদ্বাণী শোনামাত্রই আনন্দে লাফানো ঠিক নয়

এম জে আকবর

ফুলেল ভবিষ্যদ্বাণী শোনামাত্রই আনন্দে লাফানো ঠিক নয়

বছরের শেষ দিনগুলোয় জ্যোতিষদের ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে। সামনের বছরে কী অপেক্ষা করছে, জানবার জন্য তৃষ্ণাব্যাকুল মানুষ ধরনা দেয়, শোনে ভবিষ্যদ্বাণী। ব্যাকুলতার যৌক্তিক কোনো কারণ পাওয়া যায় না। জীবন যদি একটা বাক্য হয়ে থাকে তাহলে ৩১ ডিসেম্বর ওই দীর্ঘ বাক্যের একটি বর্ণমাত্র। ওই দিনটির পরের দিনগুলোয় যা ঘটবে না— ঘটবে সেই চিন্তাকে যুক্তির জালে আটকে ফেললে কৌতূহলজনিত আমোদ তো মাটি হয়ে যায়। ‘ইকোনমিস্ট’ পত্রিকায় বর্ষশেষ সংখ্যায় দেখলাম, জ্যোতিষরা অনুমান করে যা বলেন, এই ধারাটি সভ্যতার মতোই পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে ভবিষ্যৎ দেখা ও জানার রীতি ছিল। এ বিষয়ে নানারকম ঘরানা ছিল। এর মধ্যে নির্ভরযোগ্য ছিল ডেলফি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ গণনা করতেন মহিলারা। হ্যাঁ, শুধু মহিলা। সব সময় মহিলা। সম্ভবত পুরুষদের বিশ্বাসযোগ্যতা কম ছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসকে আক্রমণ করে পারস্য। তখন এথেন্সের নেতা থেমিস্তোকলস তলব করলেন ডেলফি ভবিষ্যত্দ্রষ্টাকে। জ্যোতিষ বললেন, দেশ রক্ষায় কাঠের প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।’ এ বার্তার ভিত্তিতে কর্তব্য স্থির করলেন থেমিস্তোকলস। তিনি কাঠ দিয়ে কতগুলো জাহাজ তৈরি করলেন। এসব জাহাজ সমন্বয়ে নৌবাহিনী গড়ে তুললেন তিনি। তারপর খ্রিস্টপূর্ব ৪৮০ অব্দে সালামিস নামক স্থানে বিখ্যাত সাগরযুদ্ধে জয়ী হলেন। এ ঘটনার আগে, লিডিয়ার রাজা ক্রোয়েশাস সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি পারস্যকে পদানত করবেন। ক্রোয়েশাস ছিলেন বেশুমার ধনসম্পদের অধিকারী। পররাজ্য গ্রাস করা তার জন্য কোনো সমস্যাই নয়। তবে জ্যোতিষের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। তলব পেয়ে ডেলফি এলেন। বললেন, রাজা যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন সে যুদ্ধে বিরাট একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ডেলফি জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণীটা রাজা ক্রোয়েশাসের জন্য ছিল ফুলেল ব্যাপার। বাঃ! পারস্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে! ভবিষ্যদ্বাণীটা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। যুদ্ধে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ক্রোয়েশাসের সাম্রাজ্য। কাজেই ফুলেল ভবিষ্যদ্বাণী শোনা মাত্রই আনন্দে লাফিয়ে ওঠা ঠিক নয়। ওই বাণীর ভিতরে কোন সত্যটি সুপ্ত রয়েছে, ভেবে দেখা উচিত। জ্যোতিষরা সর্বদা ঠিক কথাটি বলেন, কোনো কোনো সময় তাদের বাণী বেদনাদায়ক সত্য হয়ে দেখা দেয়।

বরফের আদি পোশাক : দিল্লি থেকে আকাশপথে শ্রীনগর যাওয়ার সময় হিমালয় পর্বতের যে দৃশ্য, তাতে মনে হলো সৌন্দর্যের বিভামণ্ডিত হওয়ার জন্য প্রতিটি পাহাড়ের প্রসাধন চর্চা দরকার। তাদের মেকআপ নিতেই হয়। বরফের মেকআপ হিমালয়কে রূপাঢ্য করে ফেলে। তার দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না। কাছাকাছি এলে, মানে গুলমার্গের মনোরম হোটেলের কামরা থেকে দেখলে তো দর্শন-নেশায় কাতর হতে হবে। এবার আমি ওখানে গেল ক্রিস্টমাসের (বড়দিন) একটু আগে। দেখি, বরফে আদি পোশাকে সজ্জিত পর্বতশ্রেণি হালকা-নীল আকাশের নিচে শুয়ে শুয়ে হাতছানি দিচ্ছে। পাইন গাছগুলোর শাখা-শাখায় তুষারকণা সূর্যের আলোয় ঝিকমিক। সূর্যতাপে কণা ঝরছে আর ঝরছে। এ যেন রূপকথার দেশের মাটি বরফ ঠেলে ঠেলে প্রকৃতির বুকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে মরিয়া। আমার চোখের সামনেই দুপুরটা গলতে গলতে যেন আসন্ন রাতের হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

অসহ্য যে বর্বরতা : কিছু সংবাদ আছে যা পাঠ শেষে বেদনায় নীল হয়ে যায় অন্তর। তখন আফসোস হয় : ‘হায়! কেন যে এটা পড়লাম!’ যেমন, ইসলামের নামে ঘোরতর অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড। ঘটনাটি ইরাকের দায়েশ ও সিরিয়ায় আইএস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের। সেখানে বন্দী নারীদের দাসী হিসেবে ব্যবহারের ও ধর্ষণের নিয়ম বিধিবদ্ধ করেছে দখলদাররা। এদের রুগ্ন মানসিকতার খেসারত দিতে হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানদের। অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা অত্যন্ত ভদ্র তারাও বিহ্বল হয়ে ভাবে : ‘এই কদর্যতা কি আদতেই ধর্মনির্দেশিত কিছু?’ ইসলামের সত্যিকারের বাণীতে যারা অনুপ্রাণিত সেই সাচ্চা মুসলমানদের রুখে দাঁড়াতে হবে নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারী বর্বরদের বিরুদ্ধে।

প্রজন্ম ও মিনিট : রুপালি পর্দার মহাজনদের বয়স প্রকাশের বিরুদ্ধে আইন চালু হওয়া প্রয়োজন। কাল পরিক্রমণের থাবা থেকে মোহরক্ষা আমরা যদি করতেই না পারলাম, তাহলে বিনোদনের সার্থকতা কী? সালমান খানের বয়স ৫০ হলো, এ তথ্য প্রকাশ করাটা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ফালতু বিশুদ্ধবাদীরা যুক্তি দেখাবেন, এক খান চলে গেলে ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে আরেক খান আসবেন। ব্যাপারটা কিন্তু অত সহজ নয়। জনচিত্তজয়ী একেকটা মহানায়ক গড়ে উঠতে এক প্রজন্ম পার হয়ে যায় এবং ও রকম মহাজনকে হারাতে লাগে এক মিনিট। সালমান খান ৩৫-এ আটকে থাকলেই মানাত, ওই বয়সটায় যৌবনের তেজ পুরোপুরি ক্ষয়ে যায় না, আর দৈহিক দৃঢ়তার ভাঙনধ্বনিও স্পষ্ট হতে শুরু করে না।

সর্বশেষ খবর