সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নৌকা-ধানের শীষ নয়, চিন্তা বিকল্প প্রতীকে নির্বাচনের

ফেব্রুয়ারিতে ইউপির তফসিল মার্চে ভোট

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে নৌকা ধানের শীষ বাদ দিয়ে বিকল্প প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও চিন্তা রয়েছে। ইউপিতে পৌর নির্বাচনের চেয়েও ভালো ফল করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। বিএনপিও চায় নীরব বিপ্লব ঘটাতে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফায় মার্চের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫০০ ইউপিতে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  এদিকে দলীয়ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিকল্প কিছু প্রস্তাব এবং প্রচার-প্রচারণার সময়সীমা কমানোর জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, দলীয় ভোট হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যক্তি ইমেজকে বেশি প্রাধান্য দেবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় দলীয় মনোনয়নে হিমশিম খেতে হবে নেতাদের। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী হলে বা কেউ নিষ্ক্রিয় থাকলে দলীয় প্রার্থীর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। তবে দলীয় ভিত্তিতেই ইউনিয়ন নির্বাচনের পক্ষে শক্ত অবস্থানে দলের নীতিনির্ধারকরা। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলগতভাবেই করার পক্ষে মত দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়া এখন থেকেই প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কাজ করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূল থেকে দলীয় ও বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দলীয় মনোনয়নে মন্ত্রী-এমপি বা তাদের আত্মীয়স্বজন নয়, ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতেও গ্রহণ করা হবে কুশলী ভূমিকা। পৌর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে দলীয় মনোনয়ন জমা নেওয়ার সময় প্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রত্যাহারের আবেদনও সংগ্রহ করা হবে। এতে করে বিদ্রোহী প্রার্থীর সম্ভাবনা থাকবে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু করতে এখনো বেশ কিছুদিন সময় আমাদের হাতে আছে। এ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতেও নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। এ জন্য পৌর নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমপি-মন্ত্রীসহ যত বড় মাপের প্রভাবশালী নেতাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা।’ তিনি বলেন, যাতে করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ মদদ দেওয়ার সাহস না দেখান। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জয় পেতে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে নেওয়া হলেও ‘নৌকা প্রতীক’ নিয়ে বিকল্প ভাবা হচ্ছে। প্রতীক ভিন্ন করার পক্ষে মতামত দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বিশেষ প্রস্তাবও দেওয়া হতে পারে।

মার্চে ৫৫০ ইউপিতে ভোট প্রস্তুতি : ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসছে মার্চে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান সংশোধনীর কাজও চলছে। তবে ইউপি নির্বাচনের আইনি কোনো সংশোধনী আসছে কি না এ জন্য অপেক্ষায় আছে ইসি। নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে উপকূলীয় অঞ্চলের ৭২ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫০০ ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মার্চের শেষ দিকে ভোট গ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন-উপযোগী সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পর সমপ্রতি এ তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দশম সংসদ, উপজেলা, সিটি ও পৌর নির্বাচনের পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি এবার ইউপি ভোট করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্চের শেষ দিকে প্রথম দফায় ভোট করার চিন্তা আছে। তবে কমিশন সভায় আলোচনা করে এটি ঠিক করা হবে। অপর একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, মার্চেই প্রথম দফা ভোট করার পরিকল্পনার বিষয়টি গোছানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মার্চের শেষ ভাগে উপকূলীয় ইউপিগুলোর নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে করা যাবে বাকিগুলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের সুবিধামতো ভোটের তারিখ নির্ধারণ করব।’ প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসি সচিবালয়কে ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। মেয়াদ পূর্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কবে, কোথায় ভোট করা যাবে এ-সংক্রান্ত তালিকা আমাদের কাছে আসবে। সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’ দেশে সব মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে মোট আটবার (১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ এবং ২০১১)। সর্বশেষ ২০১১ সালে প্রথম দফায় ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রায় ৬০০ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার ৮০০-এর বেশি ইউপির নির্বাচন করা হয়। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এ সময় কোনোভাবেই সাধারণ নির্বাচন করা যাবে না। মাঝে ভোট করার সময় রয়েছে মার্চ। এপ্রিল মাসে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। আগের মতো দুই ধাপে ভোট করা হবে, নাকি আরও বেশি ধাপে যেতে হবে, তা পর্যালোচনা করছে ইসি। পরীক্ষার ফাঁকে উপযুক্ত সময় কখন পাওয়া যাবে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শরীফা আহমেদ ১ ডিসেম্বর ৪ হাজার ৫৪৪টি (তেজগাঁও সার্কেল ছাড়া) ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা ইসি সচিবের কাছে পাঠান। এতে প্রতিটি ইউপির সর্বশেষ ভোটের তারিখ ও মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। ভোট আয়োজনের জন্য তালিকা পাঠিয়ে ইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা ও সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে এমন ইউপি বাদ দিয়ে নির্বাচন-উপযোগীগুলো বিবেচনার জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। ২০১১ সালে তফসিলে প্রথম ধাপে মনোনয়ন দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় উল্লেখ করে ভোটের জন্য সম্ভাব্য ছয়টি দিন ঠিক করে দিয়েছিল কমিশন। এর মধ্যে একটি দিন ঠিক করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সমন্বয় কমিটি তা ইসিকে অবহিত করেছিল।

 পরে ওই তারিখেই হয়েছিল ভোট। এবারও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে ইসি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ওই নির্বাচন ঘিরে অন্তত ৩৫ জন নিহত হন। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে ৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিলেন। দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের পর এবার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভোট হবে। সদস্য পদ থাকছে নির্দলীয়। পৌর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিধিমালা সংশোধনেরও প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।

সর্বশেষ খবর