সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘সমুদ্র অর্থনীতি’ চীনের সহায়তায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

‘সমুদ্র অর্থনীতি’ চীনের সহায়তায়

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের আইনি অধিকার সুনির্দিষ্ট হওয়ার পর সমুদ্র অর্থনীতি ও মেরিটাইম (সামুদ্রিক) বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চীন যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেটির কৌশলগত সুবিধা পর্যালোচনা করে দেখছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে চীনের সহায়তার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তির পর এখন একই বিষয়ে না-কি সমুদ্র বিষয়ক অন্য খাতে দেশটির সহায়তা নেওয়া হবে সেটিই পর্যালোচনা করে দেখছে ঢাকা।

ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম বিষয়ে এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আগ্রহ আছে জাপানেরও। একই বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারেও প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। বঙ্গোপসাগর ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আগ্রহের বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে মেরিটাইম সহযোগিতা বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ব্লু ইকোনমি সহায়তার ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের বিষয়ে ২০ ডিসেম্বর সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট। ওই ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম জানান, মেরিটাইম বিষয়ে চীনের সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েছি। এ বিষয়ে এখনো কোনো আউটলাইন চূড়ান্ত করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকের কার্যবিবরণী গত সপ্তাহে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বৈঠকে মেরিটাইম সহায়তার আওতায় বঙ্গোপসাগরে জলজ উদ্ভিদ ও মাছ সংরক্ষণে ‘মেরিন অ্যাকুরিয়াম’ এবং কক্সবাজারে সামুদ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চীনের সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) সহায়তা খাতে নবায়নযোগ্য শক্তি, মেরিন বায়ো টেকনোলজি, ইকো টুরিজম, সমুদ্র দূষণ, বনায়নসহ সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও গবেষণার ব্যাপারে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেওয়া হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, গতবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক অর্থনীতি রক্ষা এবং সম্পদ আহরণে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পরপরই একই ধরনের এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় চীন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবসহ গত বছর মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাকে সমঝোতা স্মারকের একটি খসড়াও পাঠায় বেইজিং। গত আগস্টে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী গোয়া হুচেং ঢাকা সফরকালে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে সমুদ্র অর্থনীতি ও মেরিটাইম বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। কর্মকর্তারা বলছেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণে চীনের এমন সহযোগিতা আরও আগেই চেয়েছিল বাংলাদেশ। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ আইনি প্রক্রিয়ায় সফল নিষ্পত্তির পর সমুদ্র সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের তত্পরতা আরও জোরদার হয়। সে সময়ে এ কাজে ‘অভিজ্ঞতা এবং কারিগরি দক্ষতা’ রয়েছে বাংলাদেশের এমন বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় সরকার। বিশেষ করে চীনকে পাশে চায় বাংলাদেশ। সাগরে থাকা সম্পদের ওপর যৌথ গবেষণা ও জরিপ, দেশীয় জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রদানসহ বেইজিংয়ের সার্বিক সহযোগিতা পেতে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাবও করে ঢাকা। কিন্তু সে সময় কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গতবছর ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে একই বিষয়ে সহায়তার প্রস্তাব দেয় চীন। এখন ভারতের পাশাপাশি চীনের সহায়তা নেওয়া হবে নাকি সমুদ্র বিষয়ক অন্য খাতে চীনের সঙ্গে সহায়তামূলক চুক্তি হবে এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর