শিরোনাম
সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
সবাই চান আখের গোছাতে

সমাবেশ ও দলীয় কার্যালয়ে যান না জাপার মন্ত্রী এমপিরা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৪০ জন মন্ত্রী-এমপির অনেকেই কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান না। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের মন্ত্রী-এমপিদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সভা-সমাবেশে আসার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও আমলে নিচ্ছেন না। কার্যালয়সহ সভা-সমাবেশে ঘুরেফিরে হাতেগোনা কয়েকজনকেই দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, দলের সভা-সমাবেশে না এসে সরকারের মন জুগিয়ে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা হাসিলে তত্পর রয়েছেন তারা।

পার্টির চেয়ারম্যান প্রায়ই সমাবেশে বলে থাকেন, এমপি সাহেবরা আমার ডাকে আসেন না। তাদের দলের কাজে পাওয়া যায় না। জাতীয় পার্টির এমপি থাকতে হলে জাতীয় পার্টির জন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু দলের চেয়ারম্যানের কথা অনেক মন্ত্রী-এমপিই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না। যারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, তাদের বানিয়েছে আওয়ামী লীগ। মন্ত্রী-এমপিরা এখন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে কেন সময় দেবেন? তারা এখন ব্যস্ত সরকারের সঙ্গে লবিং করে সুযোগ-সুবিধা নিতে। তারা ব্যস্ত আখের গোছাতে। আবার অনেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজ আসন ধরে রাখতে সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে চলেছেন। জানা যায়, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সভা-সমাবেশে খুব একটা দেখা যায় না। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের সভা-সমাবেশে দেখা যায়। কিন্তু লাঙ্গল প্রতীকে এমপি হয়ে নীলফামারী-৪ আসনের শওকত চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-১ আসনের এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনের তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এ কে এম মাইদুল ইসলাম, বগুড়া-৩ আসনের অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার, পটুয়াখালী-১ আসনের এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার,  বরিশাল-৬ আসনের নাসরিন জাহান রত্না, জামালপুর-৪ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, ময়মনসিংহ-৪ আসনের রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ আসনের সালাউদ্দিন মুক্তি, ময়মনসিংহ-৭ আসনের এম এ হান্নান, ময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমাম, ঢাকা-১ আসনের অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৬ আসনের অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, ঢাকা-৫ আসনের সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের পীর ফজলুর রহমান, সিলেট-৫ আসনের সেলিম উদ্দিন, বিবাড়িয়া-২ আসনের জিয়াউল হক মৃধা, কুমিল্লা-৮ আসনের নুরুল ইসলাম মিলন ও কক্সবাজার-১ আসনের হাজী মো. ইলিয়াস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন না বললেই চলে। তবে নিয়মিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যারা আসেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রংপুর-৩ আসনে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনের পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু, ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সিলেট-২ আসনের ইয়াহিয়া চৌধুরী। আর মাঝেমধ্যে যারা আসেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৭ আসনের অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের লিয়াকত হোসেন খোকা, হবিগঞ্জ-১ আসনের মুনিম চৌধুরী বাবু, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের মো. নোমান। জানা যায়, মাঝেমধ্যে সংসদের ভিতরে সরকারের বিরোধিতা করে ফ্লোর উত্তপ্ত করলেও বাইরের কোনো কর্মসূচিতে নেই তারা। নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও সরকারের মন জুগিয়ে চলছেন সব নেতাই। সংসদীয় দলের উপনেতা নির্বাচনে দুই শিবিরে বিভক্ত জাতীয় পার্টির এমপিরা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের অনুসারী এমপিরা কাজী ফিরোজ রশিদকে উপনেতা নির্বাচন করেছেন সংসদীয় দলের সর্বশেষ সভায়। উপনেতা হতে চাইলেও দলের কোনো কাজে নেই ফিরোজ রশিদ। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নিজ জেলা ময়মনসিংহে জাপার চার এমপি থাকলেও গত দুই বছরেও দলের তেমন কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। ময়মনসিংহ-৭ আসনের এমপি এম এ হান্নান মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক। বগুড়া জেলার ৭টি আসনের ৪টিতেই জাপার এমপি। জেলার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর দুজনই এমপি। কিন্তু দলীয় কাজে তাদের পাওয়া যায় না। সিলেট বিভাগের ৪ এমপির তিনজনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সিলেট-৫ এর সেলিম উদ্দিন, সিলেট-২ আসনের ইয়াহিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনের মুনিম চৌধুরী বাবুর বেশির ভাগ সময় যুক্তরাজ্যেই কাটে। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের কোনো কর্মসূচিতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এরশাদবিরোধী বলয়ের অন্যতম শীর্ষ নেতা। সংসদ নিয়ে ব্যস্ততা রয়েছে তার। কুমিল্লা-২ আসনের এমপি আমির হোসেন ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান এলাকায় অপরিচিত মুখ। জানা যায়, এইচ এম এরশাদ অসুস্থতার কারণে পূর্বনির্ধারিত জেলা সম্মেলনে যাচ্ছেন না। মন্ত্রীদের পাশে না পেয়ে ভাই জিএম কাদেরকে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা সম্মেলনে পাঠিয়েছেন। ১০ জানুয়ারি পঞ্চগড়, ১১ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও এবং ১২ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরিবর্তে প্রধান অতিথি হিসেবে জি এম কাদের থাকবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সফরে সঙ্গে থাকা জাপার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। এরশাদ গত ৬ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি দুটি সভায় বলেছিলেন, আমাকে আমার দলের কেউ সাহায্য করেন না। কেউ জেলা সফরে যেতে চান না। সব আমাকেই করতে হয়।

সর্বশেষ খবর