মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বৃহস্পতিবার ঢাকা আসছেন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বৃহস্পতিবার ঢাকা আসছেন

বাংলাদেশে নিযুক্ত নতুন ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব নিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা আসছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এদিন দুপুরে নয়াদিল্লি থেকে ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন ভারতীয় ফরেন সার্ভিসে ঈর্ষণীয় সাফল্যের রেকর্ডের অধিকারী এই কূটনীতিক। সর্বশেষ থাইল্যান্ডে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা হর্ষবর্ধন গত সপ্তাহে ব্যাংকক থেকে নয়াদিল্লি ফেরেন। সেখানে পেশাগত দায়িত্বের দিকনির্দেশনা নিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকেও। আগামী সপ্তাহেই  তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র পেশ করে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। সদ্য সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের মস্কোয় পদায়ন নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশে তার উত্তরসূরি হিসেবে হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নিয়োগে বিস্মিত হয়েছিলেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ থাইল্যান্ডে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার তিন বছরের মেয়াদের দুই বছরও তখন পূর্ণ হয়নি। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, হর্ষবর্ধনের ঢাকায় নিয়োগ পাওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বাংলাদেশে হাইকমিশনার পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট আলোচনা ও সতর্কতার সঙ্গেই নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

জানা যায়, ভারতের পররাষ্ট্র সার্ভিসে ৩০ বছরের কূটনৈতিক ক্যারিয়ার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার। অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিসে ১৫তম স্থান অর্জনকারী শ্রিংলা পররাষ্ট্র সার্ভিস ও বিদেশি ভাষা হিসেবে ফরাসিকে বেছে নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি দুই দফায় প্যারিসে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। মাত্র ২৭ বছরেই তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ কনসাল জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের শুরুর দিকে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন ও রূপান্তরের সময় ভিয়েতনামের হ্যানয় ও হো চি মিন সিটি— উভয় স্থানেই দায়িত্ব পালন করেন। প্রচুর ভারতীয় বংশোদ্ভূতের আবাস দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানেও দায়িত্বে ছিলেন কনসাল জেনারেলের। সহস্রাব্দের সন্ধিক্ষণে ইসরায়েলে ভারতীয় মিশনের কাউন্সেলর ছিলেন। শ্রিংলার অন্যতম বিশেষ দিক হলো বহুপক্ষীয় কূটনীতি। চার বছরের বেশি সময় তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ভারতীয় স্থায়ী মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেও ছড়িয়েছেন দ্যুতি। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ভারতের সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের বক্তব্যের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন শ্রিংলা। ২০১০-১১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ রাজনৈতিক বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। সেবার ভারত সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সার্ক) হিসেবে ছয় মাসের দায়িত্ব পালনকালে ২০১০ সালে থিম্পু সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক এ জোটের জটিলতা সামাল দিয়ে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সামর্থ্যের সত্যিকারের পরীক্ষা হয় ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কবিষয়ক যুগ্ম-সচিব (বিএসএমএম বিভাগের প্রধান) থাকাকালে। ওই সময়টাতে তার দায়িত্বে চার দেশই ছিল উত্তাল ও আসন্ন পরিবর্তনের মুখে। মালদ্বীপে বিশেষ দূত হিসেবে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মালেতে ভারতীয় হাইকমিশনে স্বেচ্ছায় আশ্রয় নেওয়া সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার আশ্বাসসহ মুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন। নাশিদ পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশও নিয়েছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমা সমস্যার সমাধান, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলার ঋণ রেখার সফল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শ্রিংলার। সর্বশেষ থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান সত্ত্বেও দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিশ্চিত রাখতে শ্রিংলা ভূমিকা রেখেছেন। ব্যক্তিগত দক্ষতা দিয়ে তিনি সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছেন।

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে শ্রিংলার সুনাম ও অভিজ্ঞতার কারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশে হাইকমিশনার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মোদি গত বছর তার বাংলাদেশ সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং ভারতের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সম্পর্ক রক্ষা করতে শ্রিংলার ওপরই নির্ভর করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজসহ ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের সঙ্গেই গত কয়েক বছরে শ্রিংলা নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করও বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে শ্রিংলার নিয়োগের পক্ষে ছিলেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশে দায়িত্ব নিতে আসাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শ্রিংলা। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের জন্য নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ব্যক্তিগত আগ্রহও রয়েছে। অবশ্য যুগ্ম-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় শ্রিংলা প্রায়ই প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতির বিষয়গুলো অবহিত করতেন এবং প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরে একাধিকবার হয়েছেন সফরসঙ্গী। সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর