শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপি ও জামায়াত মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

বাদল নূর

বিএনপি ও জামায়াত মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

সতীশ চন্দ্র রায়

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াত একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা গেলেও তাদের নির্মূল করা যাবে না। কারণ নিষিদ্ধ হলে তারা বিএনপিতে জায়গা করে নেবে। সাবেক মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায় গতকাল রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে তার বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জামায়াত ভিতরে ভিতরে নতুন দলের ছত্রছায়ায় মেরুকরণের চেষ্টা করছে। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই সে জামায়াত ছাড়বে না। আর জামায়াতও বিএনপি ছাড়তে পারবে না। এই সন্ত্রাসী দলটি দেশে জঙ্গি তত্পরতায় লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি এদের কাজ। তিনি এই দলের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সতীশ চন্দ্র রায় ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ওই সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছিলেন মাত্র ৩৯ জন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত মত্স্য ও প্রাণী সম্পদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন ২০০৮ সালে। সতীশ চন্দ্র রায়ের বয়স এখন ৭৬। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তই আছেন। তার অধিকাংশ সময় কাটে পত্রিকা ও বই পড়ে এবং টেলিভিশন দেখে। এ ছাড়া দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরল উপজেলার মোস্তফাবাদ গ্রামে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৪ সালে বিএ পাস করার পর দিনাজপুরের মহোনা মঙ্গলপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের পিতা। বড় ছেলে অরবিন্দ রায় ব্যবসায়ী, মেজ ছেলে স্নেহাংশু রায় ইঞ্জিনিয়ার ও ছোট ছেলে মানবেন্দ্র রায় পেশায় ডাক্তার। বড় মেয়ের নাম মালা রানী। ছোট মেয়ে রীনা রানী। সতীশ চন্দ্র রায় বলেন, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকারি কর্মচারী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। তিনি রাজনীতির নামে যা করেছেন, যা করেছিলেন তা রাজনীতি ছিল না। ক্ষমতায় এসে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেন। তিনি বলেন, জিয়ার যেমন সামরিক শাসন বেশি পছন্দ, বিএনপিরও তা-ই। খালেদা ও তারেকের নিশানা পাকিস্তানের দিকে। এটা দুঃখজনক যে, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানপ্রীতি ছাড়তে পারেনি। তিনি বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশে সেনা শাসনের আবির্ভাব ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। বর্তমান মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রিত্ব পাওয়াটা বড় কথা নয়, দেশ ও জনগণের জন্য কি করতে পারলাম সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের সফলতা-ব্যর্থতা দুটিই আছে। যাদের ব্যর্থতা আছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ দু-চারজনের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া যায় না। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাঠ থেকে উঠে আসা নেতা আর হঠাত্ রাজনীতিতে পদ পেয়ে যাওয়া নেতাদের কাজ এবং সাংগঠনিক দক্ষতা এক হবে না। নবীন আর প্রবীণদের এক পাল্লায় মাপাটা উচিত নয়। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাদের অভিজ্ঞতার মূল্য অবশ্যই দিতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরে দলকে সারা দেশে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করা হবে। যেসব এলাকায় সম্মেলন হয়নি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এ ব্যাপারে কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের চাঁদাবাজির কথা শোনা যায়। এটা বন্ধ করতেই হবে। আওয়ামী লীগে চাঁদাবাজদের ঠাঁই নেই। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সংগঠন করে চাঁদাবাজি করলে তাদের চিহ্নিত করা হবে। সতীশ চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকারের সময় দেশ অনেক ভালো চলছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ খেয়ে পরে ভালো আছে। কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত ফসল উত্পাদন হচ্ছে।

এখন আর কেউ মঙ্গার কথা বলতে পারে না। তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে যাবে। ষড়যন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর