রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধান বিচারপতির এক বছরের পথচলা

আহমেদ আল আমীন ও তুহিন হাওলাদার

প্রধান বিচারপতির এক বছরের পথচলা

বিচার বিভাগে তিনি এখন আলোচিত ও সদাউচ্চারিত উজ্জ্বল এক নাম। তিনি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের প্রধান বিচারপতি। ভাবনায় তার বিচার বিভাগ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছেন। আইন অঙ্গনে জাস্টিস এস কে সিনহা নামে সমধিক পরিচিত এই বিচারপতি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আপসহীন অকুতোভয় এক যোদ্ধা। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার কার্যকালের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। পেছন ফিরে তাকালে এক নজরে চোখে পড়ে এই সময়ে তার বৈপ্লবিক সব কর্মযজ্ঞ।  দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার আমলে। বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন, কার্যকর আদালত প্রশাসন ও মামলা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মামলাজট সহনীয় পর্যায়ে আনার পথে বিদ্যমান সমস্যা, সম্ভাবনা ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে ঢাকায় হয়েছিল এই সম্মেলন। তার আমলে এগিয়েছে বিচার বিভাগে ডিজিটালাইজেশনের কাজও। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জাতি স্মরণ রাখবে দীর্ঘদিন। সাধারণ আইনজীবীদের মতে, নিষ্কলুষ বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মহান উদ্দেশ্যে অবিরাম পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে বিচারালয়ের বাতাবরণে আলো ছড়াচ্ছেন জাস্টিস এস কে সিনহা। আইনজীবীদের ভাষায়, সবচেয়ে উজ্জ্বলতা ফুটিয়েছেন। মামলাজটের বিরুদ্ধে তার সুদৃঢ় মনোভাব। বিচারপতি এস কে সিনহার উদ্যোগ, নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় গত বছর আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার ২০১৪ সালের তুলনায় বেড়েছে অনেক। সারা দেশের আদালতে এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে দশ লক্ষাধিক মামলা। মামলাজট কমাতে অধস্তন আদালতের বিচারিক কর্মকালের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের কাজের সুবিন্যাস সাধনার্থে দেওয়া তার নির্দেশনার ফলে আগের চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের নথি ব্যবস্থাপনা বেশি স্বচ্ছ ও গতিশীল হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে ৪০টি এজলাস ও একই সংখ্যক জাজ’স চেম্বার সংবলিত ১২তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তার নির্দেশনায় উচ্চ আদালতে বহুতল প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর নকশা প্রণয়নের কাজও শেষ পর্যায়ে। তিনি সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের জন্য পৃথক রেজিস্ট্রারের পদ সৃষ্টি করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের পদটিও তার আমলেই সৃষ্ট। উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের কর্মচারীদের নথি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিচার বিভাগে ডিজিটালাইজেশনের জন্য তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের অন্যতম হচ্ছে অনলাইন কজলিস্ট সিস্টেম। এ ব্যবস্থায় সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের কার্যতালিকা অনলাইনে দেখা যায়। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মামলার ফলাফল সম্পর্কে জানতে পারেন। আদালতে জিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে সরকারি ব্যয়ে দাফতরিক ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত আগ্রহ ও নির্দেশনায় উচ্চ আদালতের কর্মচারীদের অফিস চলাকালীন তাদের শিশু সন্তানদের দেখাশুনার জন্য সুপ্রিমকোর্টে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাজের মান নির্ধারণে আধুনিক পদ্ধতি তথা ক্রেডিট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত এক বছরে অধস্তন আদালত পর্যায়ে ৫১৭ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার পদোন্নতির অনুমোদন দেওয়া হয়। মামলাজট নিরসন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতের জন্য বিচারপতি এস কে সিনহার নির্দেশনায় ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দিকনির্দেশনামূলক অভিভাষণ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের আদালতগুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ এবং তার প্রতিকার বিধানের জন্য সুপ্রিমকোর্টে অভিযোগ ও পরামর্শ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর এ সংক্রান্ত কমিটি শতাধিক অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ‘প্রধান বিচারপতি পুরস্কার’ দেওয়ার। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্বতন্ত্র ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা পর্যায়ে প্রতিবছর একজনকে এ পুরস্কার দেবেন সুপ্রিমকোর্ট।

সর্বশেষ খবর