বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘অতি গরিব আবু’ জাদুর পরশে এখন ধনকুবের

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

‘অতি গরিব আবু’ জাদুর পরশে এখন ধনকুবের

আবু আহমেদ ছিল অতি গরিব এক যুবক। ‘জাদুর পরশে’ সে হয়ে গেল শক্তিমান এক চোরাচালানি, ধনকুবের। ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের মোহাম্মদ তৌকিরহাট এলাকায় তার জন্ম। এক সময় তিনি এলাকার বাজারে মুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সোনা চোরাচালান এবং হুন্ডি ব্যবসা তার জীবনে হয়ে আসে ‘আলাদীনের চেরাগ’ হিসেবে। কয়েক বছরের ব্যবধানে পাল্টে যায় তার জীবনযাত্রার মান। চট্টগ্রাম শহরে অভিজাত এলাকাগুলোতে নির্মাণ করেন বেশ   কয়েকটি বহুতল ভবন এবং ক্রয় করেন ফ্ল্যাট বাড়ি। ব্যবহার করেন কোটি টাকার গাড়ি। গত সোমবার রাতে নগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ সোনার বার এবং হুন্ডির টাকা উদ্ধারের পর আলোচনায় আসে চোরাকারবারি আবু আহমেদের। তার অর্থ বিত্ত ও তথ্য পেয়ে ‘চোখ যেন চড়কগাছ’ হয়ে গেছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) বাবুল আকতার বলেন, ‘রিয়াজ উদ্দীন বাজারে উদ্ধার হওয়া সোনা ও টাকার মূলহোতা আবু আহমেদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতার ও পাওয়া তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে ডিবি। মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য বলা সম্ভব নয়।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া আবু আহমেদের কর্মজীবন শুরু হয় ফটিকছড়ির মোহাম্মদ তৌকিরহাটে মুড়ি বিক্রি দিয়ে। পরবর্তীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চলে যান সংযুক্ত আবর আমিরাতের দুবাইয়ে। একসময় দুবাই থেকে চোরাই পথে কসমেটিক ও মোবাইল সেট এনে বিক্রি শুরু করেন। পরে হুন্ডি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একসময় হুন্ডির ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন আবু। চোরাচালান করে কয়েক বছরে হয়ে যান শত কোটি টাকার মালিক। নগরীর হিলভিউ, খুলশীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় তার রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি বহুতল ভবন এবং বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। আবু আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন টিএলএক্স প্রাডো, এলিয়ন, প্রিমিওসহ একাধিক প্রাইভেট কার ও জিপ। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আবু আহমেদের হুন্ডি ব্যবসা এবং সোনা চোরাচালানে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ ছাড়া আরব আমিরাত থেকে আবু আহমেদের সোনা পাচার হয় ভারতেও। ‘নিজস্ব লোক’ হচ্ছেন— তার শালা রনি, বাহার মার্কেটের আজম, সিএনজি জসিম এবং সাইফুল। তারা আবু আহমেদের অনুপস্থিতিতে হুন্ডি ও চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন।

মামলা দায়ের : রিয়াজ উদ্দিন বাজারে সোনা চালান ও টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে ডিবি পুলিশ। মামলায় আবু আহমেদকে একমাত্র আসামি করা হয়। গত সোমবার রাতে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকার সোনা এবং নগদ ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর