শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউলুপ নির্মাণে কচ্ছপগতি

দশ মাসের কাজ শেষ হয়নি দুই বছরেও

লাকমিনা জেসমিন সোমা

ইউলুপ নির্মাণে কচ্ছপগতি

গতি নেই রামপুরায় ইউলুপ নির্মাণেও। প্রতিদিনই যানজটে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইউলুপ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮-১০ মাসের মধ্যে। কিন্তু দুই বছরেও তা শেষ হয়নি। নির্মাণে কচ্ছপগতি দেখে কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছে না কেউ। ইউলুপ দুটির একটি হলো সাইথ ইউলুপ। অপরটি নর্থ ইউলুপ। সাউথ ইউলুপের অবস্থান হাতিরঝিলের দক্ষিণ পাশে বিটিভি ভবনের সামনে। আর নর্থ ইউলুপটি নির্মাণ করা হচ্ছে মেরুল বাড্ডার কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকায়। ইউলুপ দুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বনশ্রী-হাতিরঝিল সংযোগকারী টেলিভিশন ভবনের সামনে প্রথম ইউলুপটির কাজ শেষ হয়েছে ৭০ ভাগ। এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের শুরুর দিকে। কিন্তু দুই বছরেও এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এখনো কাজ বাকি আছে ৩০ ভাগ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এর উদ্বোধনের টার্গেট নিলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি সেটি বলছে না। এ ছাড়া খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কয়েকজন এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, হয়তো আরও দুই মাস বেশি সময় লেগে যেতে পারে। অথচ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন ধরনের ইউলুপ তৈরিতে সাধারণত ৭-৮ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। জানা যায়, সাউথ ইউলুপটির দক্ষিণ প্রান্তে স্টাফ কোয়ার্টার। সেখানে বনশ্রী থেকে আসা যানবাহনগুলো বামে মোড় নিয়ে খিলগাঁও-মৌচাকের গন্তব্যে যায়। আবার পশ্চিম রামপুরা, মীরবাগ, হাজিপাড়া, মৌচাক ও খিলগাঁও থেকে আসা যানবাহনগুলোও ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে এসে বামে মোড় নিয়ে হাতিরঝিল, ডানে মোড় নিয়ে বনশ্রী প্রধান সড়ক এবং সোজা চলে যায় মেরুল-বাড্ডার গন্তব্যে। একইভাবে উত্তর প্রান্তেও হাতিরঝিল থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো ডানে মোড় নিয়ে রামপুরার দিকে, বামে মোড় নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের গন্তব্যে যায়। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট, উত্তরা, কুড়িল থেকে আসা যানবাহনগুলোকেও রামপুরা ব্রিজ হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হয়। ফলে নানা গন্তব্যের এই সম্মিলনস্থলটিতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। প্রতিদিন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকা যেন নিত্য ঘটনা। আর সে কারণেই ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৭ মিটার থেকে ১০ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থের এই ইউলুপটির দিকেই এখন তাকিয়ে আছে মানুষ। নগরবাসীর অভিযোগ, গুরুত্ব দিয়ে কাজ না করায় ইউলুপটি যথাসময়ে চালু হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা খায়রুল আলম বলেন, দুই বছর ধরে দেখছি। দুই দিন কাজ হয় তো, চার দিন বন্ধ থাকে। এখানে লোকবলও ৫-৭ জনের বেশি দেখা যায় না। এত অল্প শ্রমিক নিয়ে কচ্ছপ গতিতে কাজ করলে কীভাবে এর কাজ শেষ হবে— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অন্যদিকে মেরুল বাড্ডায় নির্মাণাধীন নর্থ ইউলুপের কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এতদিন জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় আটকে ছিল ইউলুপের কাজ। সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ৪৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ইউলুপটি নির্মাণের প্রাথমিক পর‌্যায়ে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এরইমধ্যে অধিকৃত সীমানার অভ্যন্তরে স্থাপনাগুলো কয়েক ধাপে উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ডিসেম্বর বিজয় দিবসে তারা ইউলুপ উদ্বোধনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছেন। তবে প্রথমটির অভিজ্ঞতা সেটি প্রমাণ করছে না। জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ৩০২ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা হাতিরঝিল প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হলেও এর সৌন্দর্যবর্ধন ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজগুলো বাকি থেকে যায়। এরপর ২০১৪ সালে প্রথম ধাপে সাউথ ইউলুপের কাজ শুরু হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নর্থ ইউলুপের কাজ শুরু করতেই দুই বছর দেরি করে কর্তৃপক্ষ। এটি আদৌ কবে হবে জানে না কেউ।

ইউলুপ দুটির নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী জামাল আখতার ভূইয়া গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে বেশ সময় লেগে যায়। এ কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হয়। আগামী মার্চে সাউথ ইউলুপের উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। নর্থ ইউলুপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটির কাজও শুরু হয়েছে। এখন পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এ বছর শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর