শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
টরেন্টোর চিঠি

সাত খুনের আসামি যে সুবিধা পান ডাকসুর সাবেক ভিপির তাও জোটে না

শওগাত আলী সাগর

সাত খুনের আসামি যে সুবিধা পান ডাকসুর সাবেক ভিপির তাও জোটে না

শওগাত আলী সাগর

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না জেলে আছেন অনেক দিন ধরেই। তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তার বিরুদ্ধে অনেক ভারি ভারি অভিযোগের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে। সেসব অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও ছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ ফেলতে চেয়েছেন’— এমন অভিযোগ সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অনেকবারই করেছেন। কিন্তু সেই অভিযোগগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত অনুসন্ধান করা হয়েছে— এমন কোনো তথ্য এখনো সরকারি পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

মাহমুদুর রহমান মান্না জেলে আছেন, মাঝে-মধ্যে তাকে আদালতে আনা হয়, তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয় এমন তথ্য পত্রিকায় ছাপা হয়। কিন্তু যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে, সেই অভিযোগগুলোর সত্যতা নিয়ে, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নিয়ে রাষ্ট্র এখনো দাঁড়াতে পারেনি বা দাঁড়ায়নি। কিন্তু সাঈদ তারেকের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী থেকে সাঈদ তারেক চাকরিচ্যুত হন। পুলিশের তদন্তে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অর্থাত্ তিনি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। কিন্তু পুলিশ কর্তৃক অভিযোগপত্রভুক্ত খুনের আসামি চিকিত্সার নামে হাসপাতালে বেশ আরাম-আয়েশেই কাল কাটাচ্ছেন বলে খবর বেরিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অবশ্যই চিকিত্সা সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু সাঈদ তারেককে ঠিক যে চিকিত্সা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা নয়। বরং কারাগার থেকে কৌশলে বের করে এনে হাসপাতালের কেবিনে আরাম-আয়েশে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তার জন্য। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি থাকার মতো অসুস্থতা তার নেই। তবু তিনি কেবিনে আছেন, কারাবন্দী আসামি হয়েও ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। মাহমুদুর রহমান মান্নার অসুস্থতার খবরও আমরা পত্রিকায় পড়েছি। আদালতে হাজিরা দিতে আসা মান্নার বিবর্ণ চেহারার ছবিও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। হাসপাতালে ভর্তি তো পরের কথা, পর‌্যাপ্ত চিকিত্সার সুযোগই তিনি পাচ্ছেন না বলে তার পরিবার বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে। অথচ মান্নার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই এখনো প্রমাণিত নয়, কোনো মামলায়ই পুলিশ এখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়নি। অর্থাত্ মান্না এখনো অপ্রমাণিত অপরাধের অভিযোগে জেল খাটছেন। আর সাঈদ তারেক অন্তত পুলিশের চোখে প্রমাণিত অপরাধী, পুলিশ খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলেই তো তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। অথচ সাঈদ তারেক হাসপাতালে ‘জামাই আদর’পাচ্ছেন। কেউ কেউ বলেন, মান্না সাহেব টকশোজীবী হয়েও যেভাবে খোকা সাহেবকে বুদ্ধি দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটা লাশ পড়লে কি আর করা যাবে? তাই মান্না আর খুনি সাঈদ খুব বেশি তফাত্ নেই। খানিকটা তফাত্ তো আছেই। একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েও সাত সাতটি খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। আরেকজন রাজনীতিক, তিনি সরকার পতন আন্দোলনে কয়েকটি লাশ পড়লেও ক্ষতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তার এই মন্তব্যটিকেও আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। কেননা, সরকার পতন কেন— কোনো কিছুর জন্যই একটি প্রাণের অপঘাত মৃত্যুকে আমরা সমর্থন করি না। মান্নার অপরাধ তিনি কয়েকটি প্রাণনাশের মধ্যেও সমস্যা দেখেননি আর সাঈদ তারেক সাতটি প্রাণনাশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই, মান্না আর সাঈদ তারেক সমান অপরাধী, তা হলে তো দুজনের ক্ষেত্রেই সমান ব্যবস্থা থাকার কথা। সাঈদ তারেক মাসাধিককাল ধরে আক্ষরিক অর্থেই জামাই আদরে হাসপাতালে থাকবেন আর মান্না ন্যূনতম চিকিত্সাসেবার সুযোগ পাবেন না— এটা তো হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা সারা দেশকেই নাড়া দিয়েছিল। ক্ষমতাসীন সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাতা এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সাঈদ তারেককে এই সরকার গ্রেফতার করেছে। বীভত্স সেই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত এই ব্যক্তির প্রতি যে কোনো ধরনের অনৈতিক অনুকম্পা দেশের আইনের শাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

লেখক : টরন্টোর বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক

সর্বশেষ খবর