শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রণব মুখার্জির বই

বাবরি মসজিদ ধ্বংসে দায়ী দুজন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাবরি মসজিদ ধ্বংসে দায়ী দুজন

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও এবং রাজীব গান্ধীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। নিজের আত্মজীবনী নিয়ে লেখা ‘দ্য টারবুলেন্ট ইয়ারস ১৯৮০-১৯৯৬’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডে এমনই অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপতি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলে ভারতের বহুত্ববাদী ভাবমূর্তিতে কালির আঁচড় পড়েছিল বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘বাবরি মসজিদের ধ্বংস ঠেকাতে না পারাটা ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওয়ের বিরাট ব্যর্থতা।’ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন বিষয়ে আলোচনার জন্য নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির (এন ডি তিওয়ারি) মতো উত্তর প্রদেশের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের ওপর ভার দেওয়া উচিত ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।

একই সঙ্গে প্রার্থনাকারীদের (হিন্দু) জন্য একটি জায়গা খুলে দেওয়া সম্পর্কে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রণব মুখার্জি। এ বিসয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব তার বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাম জন্মভূমি মন্দির খুলে দেওয়াটাও সম্ভবত অন্য আরেকটা ভুল ছিল এবং সাধারণ মানুষ ভেবেছিল যে এ পদক্ষেপটা এড়ানো যেত।’

গতকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনের ছোট ছোট অনেক অজানা ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। এর আগে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সময়সীমার বিবরণী সম্পর্কিত নানা কাহিনী নিয়ে প্রণবের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল। আত্মজীবনীতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরই পরিস্থিতি এক নাটকীয় মাত্রা নেয়। ক্যাবিনেট মিটিং চলাকালীন কংগ্রেস সাংসদ সীতারাম কেশরি কেঁদে ভাসিয়ে দেন। ওই বৈঠকে আমিও সেদিন উপস্থিত ছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম, এখানে অত নাটকীয়তা করার কোনো কারণ নেই। আপনাদের সবাই ক্যাবিনেটের সদস্য এবং কয়েকজন সংসদীয় বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির সদস্য। এ বৈঠকেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই আমাদের সবাইকে এ দায় নিতে হবে। এর দায় কেবল প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর বর্তায় না।’ প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘এরপর একদিন পি ভির (পি ভি নরসিমা রাও) সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেছিলাম। আমি সেদিন কোনো রাখঢাক করিনি। একটু উত্তেজিত হয়েই তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ভয়ংকর বিপদের সময় আপনাকে পরামর্শ দেওয়ার কি কেউ ছিল না? বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বিশ্বজুড়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে আপনার কি কোনো ধারণা ছিল না? যা-ই হোক, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমিত করার পাশাপাশি মুসলিমদের ভাবাবেগকে শান্ত করতে এখনই আপনার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ রাষ্ট্রপতি তার বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘আমি যখন কথাগুলো বলছিলাম, পি ভি তখন আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তার মুখে কোনো আবেগ বা প্রতিক্রিয়া দেখিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি তার সঙ্গে কয়েক দশক কাটিয়েছি।’  বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে ‘চূড়ান্ত বিশ্বাসভঙ্গ’-এর সঙ্গে তুলনা করে রাষ্ট্রপতি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘এ ঘটনার জন্য প্রতিটি ভারতবাসীরই লজ্জায় মাথা নিচু করা উচিত। এ রকম একটি ধর্মীয় কাঠামোকে ধ্বংসের ঘটনা একটা শুভবুদ্ধিহীন ও উচ্ছৃঙ্খলতার কাজ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এ ধরনের কাজ করা হয়েছিল। এর ফলে ভারত এবং পুরো বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে বড় আঘাত সৃষ্টি করেছিল। সহিষ্ণুতা, বহুত্ববাদীর দেশ হিসেবে ভারতের যে ভূমিকা ছিল, এ ঘটনা সেই ভাবমূর্তিকেও ক্ষতি করেছিল।’

সর্বশেষ খবর