সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারের আত্মসমালোচনাও দরকার : রাষ্ট্রপতি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সরকারের আত্মসমালোচনাও দরকার : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করেন—বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে আত্মসমালোচনাও থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে থাকতে হবে নিরলস প্রচেষ্টা, আত্মসমালোচনা ও সহযোগিতা। থাকতে হবে কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ।

তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে গবেষণায় সহায়তা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, গবেষণা উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। কারণ গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন জ্ঞানের, যা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখে। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সরকার দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উচ্চশিক্ষার পরিধিও আজ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে আমাদের অবিরাম তত্পরতা চালাতে হবে। গবেষণার ক্ষেত্র বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও চবির উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রসত্তার উদ্ভবের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা এই চট্টগ্রাম থেকেই সর্বপ্রথম প্রচারিত হয়েছিল মরহুম এম এ হান্নানের কণ্ঠে। একইভাবে তার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়ে রয়েছে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র বা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস। আজও বাংলাদেশের আপামর জনতার সংগ্রামের আখ্যানের স্মারক হয়ে আছে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর পদার্পণে লাখো জনতার সাক্ষী হয়েছিল এই লালদীঘি ময়দান। আমাদের স্বাধীনতার যুক্তি ও আবেগের জায়গায় তাই চট্টগ্রামের স্থান সবসময়ই বিশেষভাবে সংরক্ষিত। তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য পূরণে আমাদের তরুণ সমাজকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্মই জাতির প্রাণশক্তি, সমাজ পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। কারণ স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য আসে না। বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয়, স্যানিটেশন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সামাজিক শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর