মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
মিরপুর বেড়িবাঁধ

ছিনতাই স্টাইলে তল্লাশি

ছিনতাই স্টাইলে তল্লাশি

পুলিশের পোশাক পরিধান করে সরকারি অস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দস্যুতা-সবই চালাচ্ছিলেন তারা—প্রকাশ্যে, সবার সামনে। ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী প্রতিটি মিনিবাস আটক করে চালকদের চড় থাপ্পড় দিয়ে নিচে নামানো হয়, এরপর  দাবি করা হয় গাড়িপ্রতি ৫০০ টাকা বখরা। যে চালক দাবি পূরণ করতে পেরেছেন তিনি ততক্ষণাৎ ছাড়া পেয়েছেন গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পেরেছেন গন্তব্যে। আর যে চালকের কাছে টাকা কম ছিল, তিনি হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী তুলে আগাম ভাড়া নিয়ে দাবি পূরণে বাধ্য হয়েছেন। অবিশ্বাস্য এসব ঘটনা ঘটে রবিবার রাত ৩ টা ৯ মিনিটে। রাজধানীর উত্তর প্রবেশপথখ্যাত আব্দুল্লাহপুর পয়েন্টের পশ্চিম পাশে, সওজ অফিসের ঠিক সামনেই। প্রত্যক্ষদর্শী টঙ্গীর এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে এ প্রতিবেদককে জানান, রাত সোয়া দুইটা থেকেই তিনি পুলিশের এ বেলেল্লাপনা দেখছেন। এ চিত্র তিনি জীবনে কল্পনাও করেননি। রাত ৩ টা ২৫ মিনিট। তুরাগ পুলিশ চেকপোস্ট। একজন পুলিশ টর্চ লাইট নিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি চলাচলে ইশারা দিচ্ছেন। ইশারার তালে তালে চাঁদাও তুলছেন। ঘুম-ঘুম চোখেও গাড়ির লাইট দেখলেই পুলিশের টর্চ লাইটও জ্বলে উঠছে চাঁদার জন্য। তবে  আব্দুল্লাহপুর-তুরাগ-মিরপুর বেড়িবাঁধ রাস্তার চিত্র ছিল আরও ভয়ঙ্কর। ঘনকুয়াশা ভেদ করে বালু ভর্তি ট্রাক চলাচল করছে ওই রাস্তায়। কিন্তু হিমশীতল হাওয়াও যেন থামাতে পারছে না পুলিশের চাঁদাবাজি। ঘনকুয়াশার মধ্যেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই ট্রাক ড্রাইভারদের। চেকপোস্টে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকলেও ছুটে গিয়ে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়ছেন তারা, বাড়িয়ে দিচ্ছেন চাঁদার হাত। রাত ২ টা ৪০ মিনিট। বেড়িবাঁধ রাস্তায় রুপনগর থানার আওতায় একটি চেকপোস্ট ও দুটি টহল টিমকে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত দেখা যায়। ট্রাকচালকদের ভাষ্যমতে, আশুলিয়া-বেড়িবাঁধ রাস্তায় শত শত বালুভর্তি ট্রাকের চাঁদা তুলতেই যেন পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাস্তায় তিনটি পুলিশ চেকপোস্টের অভিন্ন দায়িত্ব পালনের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যে সব ট্রাকে বালু তোলা হচ্ছে তাদের থেকে চাঁদা আদায়ের কৌশল আবার ভিন্ন। ভুক্তভোগী ট্রাকচালক সেলিম বলেন, আমরা যেখানে বালু তুলি ওখানেই ‘পুলিশের পেমেন্ট’ নামে চাঁদার টাকা রেখে দেওয়া হয়। সুবিধা মতো সময়ে তা সংশ্লিষ্ট থানার অঘোষিত ক্যাশিয়ারের কাছে পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানরা। বেড়িবাঁধে ট্রাকপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা হাতিয়ে নেওয়ার এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের ঢাকায় পুলিশি নিরাপত্তা বিষয়ক সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য রাস্তায় নামার শুরুতেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার সাঈদুর রহমান রিমন নিজেও ঝাপটাবাজির শিকার হন। ভাটারা থানা থেকে কয়েকশ’ ফুট দূরে প্রগতি সরণিতে ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগসহ ল্যাপটপটি ছিনিয়ে চম্পট দেয়। তখন রাত সাড়ে ১০টা। নতুন বাজার থেকে রিকশায় কুড়িল মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। নতুন বাজার- কোকাকোলার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছাতেই হঠাৎ একটি মটরসাইকেল রিকশার পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময় তার ল্যাপটপসহ ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত কুড়িলের দিকে চলে যায়। কোকাকোলার এ বটতলা পয়েন্টে সন্ধ্যার পর প্রায়ই ঝাপটাবাজির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের টহল গাড়ি ভুলেও সেখানে অবস্থান নেয় না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর