শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডে মেরুকরণ

সাখাওয়াত কাওসার

ঢাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডে মেরুকরণ

রাজনৈতিক দলের কমিটি ঘিরে অস্থির আন্ডারওয়ার্ল্ড। চলছে নয়া মেরুকরণ। সরকারি ও বিরোধী দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোকদের জায়গা পাইয়ে দিতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চলছে বিশেষ তদবির। দলের প্রভাবশালীরা দেশে-বিদেশে ও কারাবন্দী এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তদবিরে অতিষ্ঠ। একই সঙ্গে আতঙ্কিতও। এরই মধ্যে কারাবন্দী ও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারীরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে শোডাউনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদেশে থেকেও জিসান আহমেদ, বিকাশকুমার বিশ্বাস, শাহাদাত হোসেন, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, কারাবন্দী পিচ্চি হেলাল, সানজিদুল ইসলাম ইমন এবং আরও কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী সক্রিয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সব দলেই তাদের পছন্দের লোক রাখতে চায়। ক্ষমতাসীন দলের ওইসব নেতার সমর্থন নিয়েই সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের সহায়তা আদায় করে। অতীতেও তাদের তত্পরতা ছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এর বাইরে অবস্থান টিকিয়ে রাখতে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

সূত্রমতে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার জন্য সাধারণ সম্পাদক পদ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। শুধু তাই নয়, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক সাঈদ কমিশনার আগামীতে সভাপতি পদে এবং দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার বাবু সাধারণ সম্পাদক পদে জিসানের সংকেত পেয়ে প্রার্থী হচ্ছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকুমার বিশ্বাস এক হয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, কারাবন্দী কিলার আব্বাস কাফরুল থানা বিএনপির সভাপতি প্রিন্সিপাল লিয়াকতকে সব ধরনের সহায়তা করে আসছেন। কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম নিজেই এবার ভাসানটেক থানা বিএনপির সভাপতি হচ্ছেন। অতীতে তিনি কাফরুল থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পল্লবী থানা যুবদলের সভাপতি বিপ্লব এবার পল্লবী থানা বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেনের তদবিরে। দীর্ঘদিন ধরে অবশ্য শাহাদতের সঙ্গে বিশেষ লিয়াজোঁ রক্ষা করে আসছিলেন পল্লবীর হাসান কমিশনার। এবার তিনিও পুনরায় মহানগর কিংবা পল্লবীতে সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন। বর্তমান ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান ও আবু আতিক আল হাসান ওরফে মিন্টুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস, সানজিদুল হক ইমন ও পিচ্চি হেলালের সহযোগীরা। আগামী কমিটিতে সোহান ও মিন্টুকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনার জন্যও তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে ধানমন্ডি, কলাবাগান থানা ছাত্রদল, যুবদলের কমিটিতে অন্য সময়ের মতো ইমনের তত্পরতা থাকবে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রদল, যুবদল এবং বিএনপি বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এলাকার কমিটির মূল একাধিক পদের জন্য কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হোসেন ওরফে পিচ্চি হেলালই তদবির করছেন বলে জানা গেছে। মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান জুয়েলকে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি করার জন্য তত্পরতা শুরু করেছেন পিচ্চি হেলাল। অতীতের কমিটিগুলোতেও পিচ্চি হেলালের মনোনীত লোক ছিল। তবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের এবারের কমিটিতে কারাবন্দী সুইডেন আসলামও তার লোকজন রাখার চেষ্টা করবেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে নেপেথ্য থেকে কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের ক্যাডার বাহিনী সর্বাত্মক সহায়তা করে আসছে। আগামীতে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ক্যাডার বাহিনী যুবলীগ সভাপতি মাইনুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আলাদাভাবে সহায়তা করে আসছেন বলে জানা গেছে। মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কাজী মারুফুল হক বিপ্লব কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফের সমর্থন নিয়ে আগামীতে যুবলীগ মহানগর উত্তরের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হচ্ছেন। এর বাইরেও জোসেফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের শাহীন আহমেদ ও সালাউদ্দীন লিটনের। তাসভীরুল হক অনুর প্রতি সমর্থন রয়েছে কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ইমনের। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক অনু আগামীতে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, ঢাকা জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন সরকারকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমতি সুব্রত বাইন সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রমতে, কারাবন্দী ও পলাতক অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আবার নিজেরা এক হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য ফোনে তদবির করছেন। নিজেদের সাম্রাজ্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে রয়েছেন তাদের অনেকেই। এর মধ্যে রয়েছেন পলাতক জাফর আহমেদ মানিক, আরমান, কিলার আব্বাস, ইব্রাহীম ও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মালয়েশিয়া যুবলীগের আহ্বায়ক তাজগীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন দলের অঙ্গসংগঠনগুলোতে নিজেদের বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে রাখার তত্পরতা চালাচ্ছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা অনেক নেতাকে ফোনও করছেন। সূত্র আরও জানায়, বিদেশে পলাতক ও কারাগারে অন্তরীণ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। মামলার খরচ ও গ্রুপের সদস্যদের সন্তুষ্ট রাখতে মাঝে মাঝেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাঁদা ওঠানো, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্য গ্রুপের সদস্যদের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই তারা সাগরেদদের কাছে ঐক্যের ঘোষণাও দিয়েছেন। এ সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছেন ইমন, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, কুত্তা লিটন, কারাবন্দী লম্বু সেলিম, আরমান, ইদুল, বিকাশ ও জিসান। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, বিভিন্ন সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশে থাকা তাদের সহযোগীদের দিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার চেষ্টা করে। তাদের রুখতে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যথেষ্ট তত্পর। তবে সন্ত্রাসীদের নতুন মেরুকরণ সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো খবর নেই।

সর্বশেষ খবর