শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশ হেফাজতে স্বামী নিহত, স্ত্রীও নিখোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ হেফাজতে স্বামী নিহত, স্ত্রীও নিখোঁজ

মমতাজ সুলতানা

পুলিশি হেফাজতে ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই মৃত্যু হয়েছিল স্বামী মাহবুবুর রহমান সুজনের। এবার নিখোঁজ হয়েছেন নিহত সুজনের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি। ৬ জানুয়ারি মামলার শুনানির দিন আদালতে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন লুসি। লুসি ও সুজনের পরিবারের অভিযোগ, স্বামীর বিচার চাওয়াই কাল হয়েছে লুসির। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও লুসির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এর আগে আসামিদের পক্ষ থেকে মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারা আরও বলছেন, এবার লুসির অনুপস্থিতিতেই তার পক্ষে  আদালতে আইনজীবী পরিবর্তন এবং সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর দুটি আবেদন জমা দিয়েছেন এক আইনজীবী। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ভুক্তভোগী এবং সাক্ষী সুরক্ষার সুযোগ না থাকলে যা হয়, লুসির ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার বিচারিক দীর্ঘসূত্রতাও অনেকটা দায়ী। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা লুসিকে চাপের মুখে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য তার ফোনও বন্ধ। আমাদের ধারণা পুলিশ এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মিরপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন সুজনের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি। বিচারবিভাগীয় তদন্তে এসআই জাহিদ, রাজকুমার, কনস্টেবল রাশিদুল, ফয়সল এবং মিথুনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এসআই জাহিদ ছাড়া বাকি চারজনই এখন পলাতক। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি লুসি নিখোঁজের পর ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহ্আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন লুসির দেবর জহিরুল সবুজ। জিডি নম্বর-১১১। গতকাল সকালে মিরপুর-১ নম্বরে নিহত সুজনের বাসায় গেলে তার মা শাহিদা বেগম এ প্রতিবেদককে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মিরপুর থানার সাবেক ওসি সালাউদ্দীনকে বাদ দেওয়ার পরই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ মামলার কি হবে? পরে শুধু এসআই জাহিদকে গ্রেফতার হলেও বাকি চারজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।  তিনি বলেন, জাহিদের মা আমার বাসায় এসে আমাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার ছেলের জান ওরা টাকা দিয়ে কিনতে চায়! এ ব্যাপারে আমি শাহ্আলী থানায় একটি জিডি করেছিলাম। নিহত সুজনের সাড়ে চার বছরের ছেলে মোশারফ ও মেয়ে লামিয়াকে দেখিয়ে তিনি বলেন, এদের কি দিয়ে আমি সান্ত্বনা দেব বলুন? এদের দেখলে আমি ঠিক থাকতে পারি না বলেই তাদের বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এ সময় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের অবতারণা হয় সেখানে।  নিহত সুজনের বড় ভাই শামীম শিকদার বলেন, আদালতে রওনা হলেও পরে মোবাইলে কল করে লুসিকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, আসামি এসআই জাহিদের মা মোবাইলে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে আপসের চেষ্টা করেন। তার ছেলেকে বের করে দিলে সারা জীবন মা ও সুজনের ছেলেমেয়েকে দেখাশোনার কথা বলেছিলেন জাহিদের মা। এ ব্যাপারে টেলিফোনে কথা হয় এসআই জাহিদের মায়ের সঙ্গে। মামলা আপসের কথা স্বীকার করলেও লুসির নিখোঁজের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার কাইয়ুমুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লুসিকে উদ্ধারের সব তত্পরতা অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরে বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি লুসির পক্ষের আইনজীবী ও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে আদালতে দুটি আবেদন করেন আবদুল হান্নান। সরকারপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, লুসির নিখোঁজের ব্যাপারে তাদেরও কিছু জানা নেই। তবে আইনজীবী সালমা আলী বলেন, আমার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) ছাড়া মামলার আইনজীবী পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন নিবারণ আইনে প্রথম মামলা মিরপুরের সুজন ও পল্লবীর জনি হত্যা মামলা। দুটি মামলারই আসামি এসআই জাহিদ। আর মামলা দুটি পরিচালনা করছে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। লুসির হঠাৎ নিখোঁজের ঘটনায় তারাও মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। লুসি নিখোঁজের পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত জনির পরিবারও। নিহত জনির ছোটভাই ও মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, জাহিদের বিরুদ্ধে একটি মামলার বাদী তিনি। লুসি নিখোঁজ হওয়ায় আশঙ্কায় আছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর