রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

উল্টোপথে ড্রাইভিং কানে মোবাইল

উল্টোপথে ড্রাইভিং কানে মোবাইল

বুধবার বেলা দেড়টা। আজিমপুরের উদ্দেশে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ক্রস করছিল বিকল্প পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। ক্রস করার সময় মুঠোফোনে কথা বলছিলেন চালক। যাত্রীদের আপত্তি সত্ত্বেও মধ্যবয়সী ওই যুবক এক হাতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে মোড় অতিক্রম করে সাঁই করে আজিমপুরের দিকে চলে যায় পরিবহনটি। শুধু ওই যুবকই নন, ঢাকাসহ সারা দেশেই বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ সব শ্রেণির যানবাহনের চালকরা কানে মুঠোফোন রেখে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। অন্যদিকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে উল্টোপথে গাড়ি চলছে হরহামেশা। ফুটপাথে উঠে পড়ছে মোটরসাইকেল। আইন না মানার মধ্যে মন্ত্রী-এমপি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমের গাড়ির সংখ্যাই বেশি। মোটরসাইকেল যেন ফুটপাথে না উঠে তা নিশ্চিত করতে ২০১২ সালের ৫ মার্চ পুলিশকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়াও পথচারীদের হাঁটার অধিকার সংরক্ষণে সিটি করপোরেশন, মোটরযান আইন এবং মহানগর পুলিশ অর্ডিন্যান্সে বিভিন্ন বিধান রয়েছে। কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। হাইকোর্টের নির্দেশনার তিন বছরেও ফুটপাথে মোটরসাইকেল ওঠা বন্ধ হয়নি। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, ঢাকা শহরে ঘটা দুর্ঘটনাগুলোর শিকার হচ্ছেন ৮৬ শতাংশ পথচারী। তাদের নির্বিঘ্ন চলাচলের সুযোগ না থাকাই এর অন্যতম কারণ। পথচারীদের চলাচলের নানামুখী বাধার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে পবা বলেছে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরও ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলাচল কমেনি। বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথকেই চলাচলের পথ বেছে নিয়েছেন মোটরসাইকেলের আরোহীরা। সরেজমিন নগরীর ব্যস্ততম শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, খামারবাড়ী, আগারগাঁও, খিলগাঁও, রামপুরা, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাথের ওপর দিয়ে চলছে মোটরসাইকেল। চলতে সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে তারা গালমন্দও করছেন।

জানা যায়, রাজধানীতে ছোট-বড় যাত্রী পরিবহনে বাসের চালকদের একটি অংশ অল্পবয়সী। এর মধ্যে নিরক্ষর রয়েছেন বড় একটি অংশ। আবার শিক্ষিত চালকও রয়েছেন, যারা প্রাইভেটকার, সরকারি-বেসরকারি পরিবহন কিংবা মোটরসাইকেল চালান। তাদের কানেও থাকে মুঠোফোন। গাড়ি চালান উল্টোপথে। অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশও কিছু করতে পারে না। আবার আইন লঙ্ঘনকারী অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে ফুটপাথে নির্বিঘ্নে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টির তদারকি মাঠপর্যায়ে নেই। বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের পাশাপাশি ফুটপাথ দিয়ে পুলিশের মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দেখা যায়। ফুটপাথে চলাচলকারীরা সময়-স্বল্পতার অজুহাত দেখান। তবে পুলিশের দাবি, ফুটপাথ দিয়ে চলাচলের অভিযোগে মোটরসাইকেলের আরোহীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক মাঠ কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক বিভাগে লোকবল কম থাকায় সব জায়গায় তদারক করা সম্ভব হয় না।

গুলশানে শামসুর রহমান নামে এক পথচারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের চলাচলের জন্য কোনো জায়গা  নেই। রাস্তায় গাড়ি আর ফুটপাথে চলে মোটরসাইকেল। হাইকোর্টের নির্দেশনাও কেউ মানছেন না। পুলিশও তদারকি করছে না। পথচারীরা যাবে কোথায়!’ একাধিক পথচারী বলেন, ফুটপাথে মোটরসাইকেলের চালকদের রুখতে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে কার্যকর করতে হবে তা দ্রুত। ফুটপাথ দিয়ে  মোটরসাইকেল চালানো ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক জরিমানা করতে হবে। এ ছাড়া ফুটপাথ দিয়ে চালানো মোটরসাইকেলে কোনো ব্যক্তি আহত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেন দোষী চালককে তাত্ক্ষণিক সাজা দেওয়া যায়, তৈরি করতে হবে এমন বিধান। এ ধরনের মোটরসাইকেল-চালকদের শক্ত হাতে দমন করে পথচারীদের ফুটপাথ দিয়ে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর