রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবার ছাত্রলীগ

চট্টগ্রামে মিছিলে গোলাগুলি, ইবিতে চাকরির দাবিতে ভবনে তালা, সিলেটে কলেজে ঢুকে কর্মীকে ছুরিকাঘাত করলেন নেতা

প্রতিদিন ডেস্ক

ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলীয় বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। এ নিয়ে গতকালও নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতা এবং মারধর-ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে এক ছাত্রলীগ নেতা নিজ কর্মীদের হাতে ছুরিকাহত হয়েছেন। আরেক নেতাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে লাগাতার সন্ত্রাস চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আন্দোলনে ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— সিলেট : সিলেটের মদন মোহন কলেজে নিজ দলের কর্মীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম আহমদকে পিটুনি দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ সায়েমকে পুলিশে সোপর্দ করে। গতকাল বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ছুরিকাঘাতে আহত ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সত্যজিত্ দাসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। গণধোলাইয়ের শিকার ছাত্রলীগ নেতা সায়েম আহমদকেও ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে জানা গেছে, মদন মোহন কলেজের সাইফুর রহমান ভবনের বাথরুমের পাশে সায়েম আহমদকে দেখতে পান ছাত্রলীগ কর্মী ও কলেজে সরস্বতী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিত্ দাস। সায়েমের কোমরে ছোরা দেখে তাকে ক্যাম্পাসে আসার কারণ জানতে চান সত্যজিত্। এ নিয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে সায়েম সত্যজিতের পেটে ও কানে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া করে সায়েমকে মির্জা জাঙ্গাল এলাকা থেকে আটক করে ক্যাম্পাসে এনে মারধর করে। পরে অধ্যক্ষ তাকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানান, ছাত্রলীগ নেতা সায়েমকে আটক করা হয়েছে। পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়ায় তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. কায়সারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার কায়সার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী। যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তারা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। ঘটনার ব্যাপারে কায়সার অভিযোগ করেন, রনির অনুসারীরা কোনো কারণ ছাড়াই তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। অন্যদিকে মহিউদ্দিন অনুসারী ও মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। এ ছাড়া এ দিন সকালের দিকে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঝটিকা মিছিল বের করলে পাল্টা মিছিল বের করে ছাত্রলীগের একাংশ। অভিযোগ করা হয়েছে, ছাত্রলীগের এ মিছিলে শিবির গুলি চালায়। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা শিবিরকর্মী সন্দেহে স্থানীয় কয়েকজনকে গণপিটুনি দেয় ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। ফলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা দুই ঘণ্টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান স্বপদে প্রত্যাবর্তনের পরপরই চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী ও বহিরাগতদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। চাকরির দাবিতে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দেন তারা। এ সময় তারা প্রশাসন ভবনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। এ অবস্থায় প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহনকারী বাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ও ইংরেজি বিভাগে প্রফেসর পদে যোগ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনের কোনো উত্তর না আসায় গতকাল পুনরায় স্বপদে যোগ দেন।

যোগদানের পরপরই চাকরিপ্রত্যাশীরা চাকরির দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন। দুপুরে তৌফিকুর রহমান হিটলার, শফিকুর রহমান, মিজানুর রহমান টিটু, কাশেম মাহমুদ, মাহবুব হোসেন, আশিকুর রহমান জাপান, ইলিয়াস  জোয়ার্দার, মাহমুদ হাসান লেনিন, মাসুদ রানা, আরব আলী, আনিসুজ্জামান লিটন, রাসেল জোয়ার্দার, বহিরাগত ক্যাডার বোমা পিকুল, মিন্টুসহ ৩০-৩৫ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী ও বহিরাগতরা প্রশাসন ভবনে এসে হট্টগোল শুরু করে। এ সময় তারা প্রশাসন ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধাক্কা দিয়ে বের দেয়। পরে প্রশাসন ভবনের মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার তার কার্যালয়ে এবং অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এতে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। কুষ্টিয়া শহরে থাকা গণিত বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘চাকরিপ্রত্যাশীদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিম্মি। প্রশাসনের ব্যর্থতায় বার বার এই চাকরিপ্রত্যাশীরা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’ এ ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘চাকরির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলে আমরা তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর