শিরোনাম
রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী ইরান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগে আগ্রহী উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ইরান। বিশ্ব অর্থনীতিতে এক যুগের অবরোধ থেকে বেরিয়ে আসা এ দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি বলেছেন, আপাতত বাংলাদেশে ব্যবসার পরিকল্পনা ও বাজার-বাণিজ্য সম্পর্কোন্নয়নে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করবে ইরান। এর সুফল পাওয়ার মধ্য দিয়ে এক বিলিয়ন বা তারও বেশি সরাসরি বিনিয়োগ হতে পারে। জি টু জি (দুই দেশের সরকার থেকে সরকার) বা বেসরকারি খাতে এ বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এলপিজি, এলএনজি, সিমেন্ট ও এর ক্লিঙ্কার, প্লাস্টিক ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করতে চায় ইরান। গতকাল মহাখালীর নিটল সেন্টারে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআই ও ঢাকা সফরে আসা ইরানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, ইরানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের প্রধান দেশটির ট্রেড প্রমোশন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শিল্প, খনিজ ও বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রীর উপদেষ্টা মোহাম্মদ রেজা মওদুদি ও এফবিসিসিআইর পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম। ইরানি প্রতিনিধি দলটি পাঁচ দিনের সফর শেষে গতকাল ঢাকা ত্যাগ করে। সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি বলেন, ইরানের লক্ষ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সফর সে ক্ষেত্রে ভালো সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ইরান কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের কাঁচামাল, তেল-সিমেন্টের ক্লিঙ্কারসমৃদ্ধ দেশ। এ খাতগুলোয় ইরান যৌথভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ জন্য একটি নতুন চুক্তি হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ-ইরানের বাণিজ্য সম্ভাবনা এখন অনেক ভালো। ইরানে ১ লাখ ৬০ হাজার শিল্প কারখানা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের বাজারে ইরানের ভালো সম্ভাবনা আছে। দুই দেশের পারস্পরিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অনেক পুরনো। এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ইরান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে উৎসাহী। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে গিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তিনি বলেন, ইরান আমাদের দেশ থেকে ওষুধ নিতে চায়। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। তিনি চীন, জাপান ও ভারতের মতো ইরানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

ইরানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের প্রধান মোহাম্মদ রেজা মওদুদি নিজ দেশের ওপর অবরোধের কারণে সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ইরানের ইতিহাস দুই ভাগে। প্রথম ভাগ অবরোধের আগের। দ্বিতীয় ভাগ অবরোধের পরের। মাঝখানে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। বাংলাদেশের বাজার ও মানুষের মন অনেক বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের অতিথিপরায়ণতায় আমি মুগ্ধ। আমরা খালি হাতে ফিরছি না। এ সফরে আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি হতে যাচ্ছে। কারণ, আমাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইরানের নম্বর ওয়ান ব্যবসায়ী। এ সংবাদ সম্মেলনের আগে ইরানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। ইরান অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইরান এশিয়ায় বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বলছে বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা আগামী দিনগুলোয় ব্যাপকভাবে বাড়বে। কারণ বাংলাদেশে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। ফলে এলপি গ্যাসের ব্যবহার আগামী দিনগুলোয় খুবই জনপ্রিয় হবে। এ বিবেচনায় ইরান এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার তৈরিতে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে দেশটি স্বল্পমূল্যে কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারবে বলেও তিনি জানান। কাতারের চেয়ে ইরান কম দামে এলএনজি গ্যাস সরবরাহে আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, তারা চায় বাংলাদেশ ২০ থেকে ২৫ বছরের চুক্তিতে এলএনজি কিনুক। এলএনজি কম দামে দেওয়ায় আগ্রহ দেখিয়েছে ইরান। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা যৌথভাবে এলএনজি রিফাইনারি স্থাপন করতে পারেন বলেও প্রস্তাব দিয়েছে ইরান।

সর্বশেষ খবর