রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

সব মায়ের আহাজারি সমান বেদনার

প্রভাষ আমিন

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ছাত্রলীগ নেতা শেখ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ১১ দিন ধরে নিখোঁজ। ২৬ জানুয়ারি রাতে বাড্ডার এক বাসা থেকে সাধারণ পোশাকের তিন ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। তার পরিবার র্যাব, পুলিশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী— সব জায়গায় ধরনা দিয়েও মোয়াজ্জেমের খোঁজ পাচ্ছে না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি প্রার্থী মোয়াজ্জেম ছাত্রলীগের ভালো সংগঠক হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। দল যখন ক্ষমতায়  তখন মোয়াজ্জেমের মা সালেহা বেগমের আহাজারি ‘কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না আমার ছেলেটাকে।’ সকালে পত্রিকা হাতে নিয়ে এক মায়ের আহাজারি পড়ে মনটা ভার হয়ে গেল। কিন্তু এর প্রতিকার কী, আমি জানি না। মোয়াজ্জেম প্রায়ই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যেতেন। এখন তার পরিবার গিয়ে বসে থাকছে। কিন্তু খোঁজ মিলছে না। আমার মনে হয়, সমস্যা অন্যখানে। আপনি যখন কাউকে দিয়ে একটা অন্যায় করাবেন, সেই লাইসেন্স দিয়ে সে আরও দশটা অন্যায় করবে। রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘকে ঠেকিয়ে রাখা সত্যি মুশকিল। গুম সমস্যা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল হয়ে এখন ছাত্রলীগে এসে ঠেকেছে। এতদিন আমরা গুম হয়ে যাওয়া ছাত্রদল, যুবদলের নেতা-কর্মীদের মায়েদের আহাজারি শুনেছি। হারিয়ে যাওয়া সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনে বিলাপ করেছেন। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল— সব মায়ের আহাজারিই আমার কাছে সমান বেদনার। মোয়াজ্জেমকে বা আগের ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের কারা তুলে নিয়ে গেছে, আমরা জানি না। র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা— সবাই বার বার বলেন, তারা তুলে নেননি। আমরা তাদের কথা বিশ্বাসও করি। কিন্তু অস্বীকারেই দায়িত্ব শেষ নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব গুম হয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি মানুষকে খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, অন্ততপক্ষে রহস্য উদ্ঘাটন করা। রাষ্ট্রের কোনো বাহিনী তুলে নেয়নি— এটা বলার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং ব্যর্থতা আছে। তার মানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে বড় কোনো বাহিনী আছে, যারা দিনের পর দিন, একের পর এক, ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সব দলের মানুষকে তুলে নিয়ে গুম করে দিতে পারে; কিন্তু রাষ্ট্র তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না। এই যে পুলিশ এমন বেপরোয়া হয়ে গেছে, একের পর এক অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে— বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী কেউই পুলিশের হেনস্তা থেকে বাঁচতে পারছেন না। চাঁদা না পেয়ে নিরীহ চা-দোকানিকে পুড়িয়ে মারে পুলিশ। সবার প্রশ্ন, কেন? উত্তরটা আমি জানি না, ধারণা করতে পারি। পুলিশ মনে করে, বর্তমান সরকারকে তারাই ক্ষমতায় এনেছে, তারাই টিকিয়ে রেখেছে। তাই তাদের যা ইচ্ছা, তাই করার অধিকার আছে। ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন— যেমনই হোক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু সেই নির্বাচনের পর গণতন্ত্র চেয়েছি, পুলিশি রাষ্ট্র নয়। প্লিজ, বেপরোয়া পুলিশ এবং তার চেয়েও বেপরোয়া ও শক্তিশালী অজ্ঞাত সেই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আইনের শাসন না থাকলে অর্থহীন হয়ে যাবে সব উন্নয়ন। সন্তানহারা মায়েদের আহাজারিতে হারিয়ে যাবে সমৃদ্ধির সোনালি দিন। লেখক : সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর