মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছাত্রদলের আগুনে পুড়ল বিএনপি অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রদলের আগুনে পুড়ল বিএনপি অফিস

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছেন ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এতে ভবনটির চার তলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কক্ষটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির এ ছাত্র সংগঠনটির সব সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি, চেয়ার-টেবিল-কম্পিউটারসহ সব আসবাবপত্র ও দলিল-দস্তাবেজ পুড়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন থাকায় কার্যালয়টি অন্ধকার ও ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ভবনটির প্রধান ফটক থেকে ওপর পর্যন্ত সন্ধ্যার পর সব স্থানেই ছিল পেট্রল পোড়ার গন্ধ।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। একই সময়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের নিচের চায়ের দোকান ও জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন এবং সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ও ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে মোটরসাইকেলসহ ভ্যান গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই চার তলায় ছাত্রদলের কার্যালয়টি শতভাগ পুড়ে শেষ হয়ে যায়। ঘটনার জন্য ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বৈষম্যকে দায়ী করেন। অবশ্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন অন্য কথা। পুরো ঘটনার জন্য তিনি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেন। ঘটনার পরপরই রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আর যাই করুক, প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি পোড়াতে পারে না। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মদদে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নারকীয় এ অপকর্মের বিচারের দায়ভার আমরা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম। কারণ রক্ষক হয়ে যারা ভক্ষকের ভূমিকা নিয়েছে, সেই অপরাধীদের কাছে অপরাধের বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই। এ সময় তার পাশে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহীন, রফিক শিকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের আখতারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল বানচাল করতেই সরকারের মদদে দুষ্কৃতকারীরা কার্যালয়ের সামনে ও ভিতরে এ ভাঙচুর চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ। জানা যায়, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের সমর্থক শতাধিক কর্মী নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় আচমকা কার্যালয়ের সামনের ব্যানার-ফেস্টুন, ভাঙচুরসহ ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে কার্যালয়ের সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেল ও ভ্যান গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে চতুর্থ তলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথমে ভাঙচুর ও পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।  খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রায় আধা ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে নয়াপল্টন কার্যালয় ত্যাগ করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গণহারে স্কুল-কলেজের জুনিয়র ছাত্রসহ কয়েকশ’ অকর্মণ্য এবং অছাত্রের নাম ঢোকানোর অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের কমিটিকে বর্ধিত করে ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন সংগঠনটির সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। বৃহত্ আকারের এ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়াদের পাশাপাশি যারা বঞ্চিত হয়েছেন সেসব নেতা-কর্মীই গতকাল এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে জানা গেছে। এর আগে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা রবিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আগের দিন শনিবার রাতে ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন বেগম খালেদা জিয়া।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রয়েল সাংবাদিকদের বলেন, ঘোষিত ৭৩৬ সদস্যের কমিটিতে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ত্যাগী অনেক কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটিতে স্থান পাননি। বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি এবং রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান। একই সঙ্গে এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ও পদবঞ্চিতদের আন্দোলন চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। কাউকে আটকও করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর