শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো

সাঈদুর রহমান রিমন

দেশে অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বৈধ লাইসেন্সে মাত্র ৭ হাজার ৬০০ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অন্তত দেড় লাখ প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন পাঠিয়েই বড় বড় হাসপাতাল খুলে বসেছেন। ভুঁইফোড় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল বিভাগটি বরাবরই চরম উদাসীন।

আর এ সুযোগে রাজধানীসহ দেশের যত্রতত্রই প্রতিনিয়ত ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম। সাইনবোর্ড-সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার নামে চলছে ‘গলা কাটা বাণিজ্য’। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, সরকারি অনুমোদন নিয়ে সারা দেশে ২ হাজার ৭১৮টি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ৪ হাজার ৫৯৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি পরিচালিত হচ্ছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, শুধু রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাতেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ২০ হাজারের বেশি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার লাইসেন্স চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রাথমিক আবেদনপত্র পাঠালেও আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে।

ভুয়া চিকিৎসকদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড : দেশের সর্বত্র ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের ছড়াছড়ি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাড়ছে তাদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন আইটেমের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে সাইনবোর্ড সেঁটে নিরীহ ও সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করে আসছেন তারা। ফলে স্বাস্থ্যসেবায় বিরাজ করছে চরম অরাজকতা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঝুঁকি। ভুয়া চিকিৎসকরা অর্থের জন্য রোগীর দেহে স্পর্শকাতর অস্ত্রোপচার করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। দেশজুড়ে এ অবস্থা তীব্র আকার ধারণ করলেও চিকিৎসকদের নিবন্ধন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএমডিসির হিসাবে, শুধু রাজধানীতেই রয়েছেন আড়াই সহস াধিক ভুয়া চিকিৎসক। সারা দেশে এ সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। তবে বাস্তবে বিএমডিসির দেওয়া পরিসংখ্যানের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ভুয়া চিকিৎসক দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের পাশাপাশি জাল ডিগ্রিধারী ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’-এর সংখ্যাও কম নয়। তারা এমবিবিএস পাসের পর নামের আগে-পিছে দেশ-বিদেশের ভুয়া উচ্চতর ডিগ্রি ব্যবহার করে বছরের পর বছর রোগী দেখছেন। মোটা অঙ্কের ফি হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেউ বা মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাস করে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে করে যাচ্ছেন যে কোনো অস্ত্রোপচার। এদিকে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবহেলার সুযোগে প্রাইভেট ক্লিনিক ও চিকিৎসকের অযথা ল্যাবরেটরি টেস্ট করানোর প্রবণতাকে পুঁজি করে প্রতিদিন চিকিৎসার নামে কাটা হচ্ছে দেশের নাগরিকদের গলা। হারবাল চিকিৎসার নামে পাড়া-মহল্লাসহ মোড়ে মোড়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধির কথিত মহৌষধ বিক্রি করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চিকিৎসাক্ষেত্রে এসব অব্যবস্থাপনাই শেষ নয়, রাজধানীর যত্রতত্র রোগবালাই ভালো করে দেওয়ার নামে গড়ে উঠেছে কথিত আধ্যাত্মিক সাধনার আস্তানা। ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া, তেলপড়া, ডিমপড়া, তদবিরে রোগমুক্তির দাপুটে বাণিজ্যের কাছে রোগীরা বড়ই অসহায়। জিন সাধনার মাধ্যমে যাবতীয় রোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে টিয়াপাখির ঠোঁটে ভাগ্য গণনার আসরও বসে খোদ রাজধানীতে।

সর্বশেষ খবর