বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিবর্তনের ছোঁয়া পাট খাতে

শিমুল মাহমুদ

পরিবর্তনের ছোঁয়া পাট খাতে

মির্জা আজম

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, পাট খাতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আমরা পাটের হারানো বাজার ফিরিয়ে এনেছি। দেশে ২৫ লাখ বেল কাঁচা পাটের বাজার সৃষ্টি করেছি। তিনি বলেন, পাটকল বেসরকারি খাতে বিক্রির নামে লুটপাট করা হয়েছিল। সেগুলো ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা আজম বলেন, ’৭৫-পরবর্তী সামরিক সরকারের পলিসি ছিল দেশের পাটকলগুলো বন্ধ করে বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া। মূলত জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পলিসি নিয়ে চালু পাটকলগুলোকে ধ্বংস করেছেন। ২১ বছর ধরে এভাবেই চলেছে। সরকারের অনুমোদনে বেসরকারিকরণের নামে পাট খাতে লুটপাট করা হয়েছে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে পাটকল, বস্ত্রকল বিক্রির সব প্রক্রিয়া বন্ধ করেছেন। ইতিপূর্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল চালু করেছেন। পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করেছি। পাটের স্থানীয় কোনো বাজার ছিল না। আমরা প্যাকেজিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে ২৫ লাখ বেল কাঁচা পাটের বাজার সৃষ্টি করেছি। ইতিমধ্যে যেসব বেসরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো আবার চালু হয়েছে। পাট ছিল আমাদের শতভাগ রপ্তানি পণ্য। আমাদের পাটের বাজার মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা থাকলে কিংবা পাটের বাজার না থাকলে পাট নিয়ে আমাদের বিপদে থাকতে হতো। কৃষক দাম পেত না। পাটকল বন্ধ হয়ে যেত। এখন আমরা পাটের নিজস্ব মার্কেট পেয়েছি। দেশে পাট খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মির্জা আজম বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৮৭টি পাটকল ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৬০টি মিল বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। অধিকাংশই বিক্রি করা হয়েছে নামমাত্র দামে। ৫০ কোটি টাকার মিল বিক্রি করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা দামে। তারপরও সেটা ছিল বাকিতে। তবে শর্ত ছিল মিলগুলো চালাতে হবে। মিলের চরিত্র বদল করা যাবে না। কিন্তু অনেকে শর্ত লঙ্ঘন করে পাটকলের জায়গায় তেলের মিল করেছে। শর্ত ছিল, ১০ বছরের মধ্যে সরকারের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মিল এক টাকাও পরিশোধ করেনি। মিল বন্ধ করে রেখেছে। অনেক মিলে বিশাল জায়গা, গাছপালা রয়েছে। মিলের গাছপালার দামই ১০-২০ কোটি টাকা। কিন্তু গাছপালার চেয়েও কম দামে মিল বিক্রি করা হয়েছে। তারা প্রথমে মিল নিয়ে গাছপালা বিক্রি করে দিয়েছে। পরে মেশিনারি বিক্রি করেছে। ঘরবাড়ি বিক্রি করেছে। এমনকি মিলের জমিও ভাড়া দিয়েছে। বাজার ও মার্কেট বসিয়েছে। অন্য কোনো ফ্যাক্টরিকে ভাড়া দিয়েছে। এভাবে পাটকল নিয়ে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন, যেসব মিল শর্ত লঙ্ঘন করেছে, মিল বিক্রি করেছে, বন্ধ রেখেছে সেগুলো ফিরিয়ে নিতে। ইতিমধ্যে আমরা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ঢাকা জুটমিলসহ কয়েকটি মিল ফিরিয়ে নিয়েছি। এ ছাড়া পাটকল বিক্রির নামে নিয়মনীতি না মেনে লুটপাট করার অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হয়েছে। ৫০-৬০টি বিক্রির ফাইল তদন্ত হচ্ছে। কিছু দুর্নীতি দমন ব্যুরো তদন্ত করছে। শর্ত লঙ্ঘনকারী ১০-১৫টি মিলের ফাইল অনুমোদন করা আছে।

মির্জা আজম বলেন, সরকার ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট করায় এক বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান হয়েছে। কিন্তু কাউকে জেল দিতে হয়নি। মানুষ সহজেই নতুন এই আইন মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, পাট থেকে আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তারা ১৩১ প্রকারের পণ্যসামগ্রী তৈরি করে। তাদের উৎসাহিত করতে আগামী ৬ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাট উৎসব করব আমরা। এ সময় পাটপণ্যের মেলাও অনুষ্ঠিত হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। জেলায় জেলায়ও আমরা পাটপণ্যের মেলা করব।

সর্বশেষ খবর