শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
লেখকের অন্য চোখ

একটু ভাবুন

সমরেশ মজুমদার

একটু ভাবুন

দিন পনের আগে কলকাতা বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’ অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত হয়েছিলাম। এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর। আমার প্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব এই মানুষটিকে অনেকদিন পরে দেখে উল্লসিত হয়েছিলাম। কিন্তু যিনি সঞ্চালক ছিলেন তিনি সম্ভবত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মী, আমার পরিচয় দিলেন এই ভাবে— এখন  ইন্ডিয়ার লেখক, সমরেশ মজুমদার... ইত্যাদি। আমি সেই মঞ্চেই প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম আমার পাসপোর্ট অবশ্যই ভারতের। নাগরিকত্ব ভারতবর্ষের। কিন্তু আমি বাংলা ভাষায় লেখক। পৃথিবীর যে স্থানে কোন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন তিনি আমার আত্মীয়। সেই আত্মীয়ের জন্যই আমি লিখি। দয়া করে ভারতীয় লেখক বলে দূরে সরিয়ে দেবেন না। কথাগুলো আবার মনে এল এই কারণে যে এখন ঢাকায় একুশের বইমেলা চলছে। ভারি আনন্দের বইমেলা। বেশ কয়েক বছর ধরে শুনছি, এবারও কানে আসছে, মেলায় বিদেশি লেখকদের বই বিক্রিতে আপত্তি জানানো হচ্ছে। সেই লেখক বাংলা ভাষায় লিখলেও না। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন যেসব প্রকাশক ঢাকায় বসে আমার বই প্রকাশ করেছেন। বৈধ উপায়ে ছেপেও তারা কেন বিক্রি করতে পারবেন না? কেন মেলায় গিয়ে পাঠক আমার বই কিনতে পারবে না? এই আদেশের পেছনে কারণ কি আমার তা জানা নেই। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের নবীন লেখকদের বই যাতে বেশি বিক্রি হয় তার ব্যবস্থা করতে বিদেশের বাঙালি লেখকদের বাংলা বই বিক্রি বন্ধ করতে হচ্ছে। কেউ বলছেন ঢাকায় প্রকাশকদের উৎসাহ দেওয়া হবে এটা করলে। কিন্তু আমার বাংলাদেশের প্রকাশকরা তো ঢাকায় থাকেন। তাদের বঞ্চিত করা হবে কেন? মনে পড়ছে পাকিস্তানি আমলে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম বাংলা থেকে বই আমদানি করা নিষিদ্ধ ছিল। বইমেলায় আমাদের বই বিক্রির ব্যাপারে মাননীয় শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের কোন আপত্তি নেই। তাহলে মেলার কর্মকর্তারা এই বিভাজন তৈরি করছেন কেন? হয়তো সাময়িকভাবে তারা ক্ষমতা দেখাতে পারবেন, কিন্তু বাংলাদেশের পাঠক সেটা কতদিন মেনে নেবে? আর একটা কথা, কলকাতার বইমেলায় বাংলাদেশে প্রকাশিত বই নিয়ে যেসব প্রকাশক সেখান থেকে আসেন তারা পাঠকদের উষ্ণতা অনুভব করেন। বন্ধুত্ব তখনই স্থায়ী হয় যখন দুটো হাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর