বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

গোরস্থানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি

খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সংখ্যালঘু ধর্মগুরু পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যাকাণ্ড ও পূজারিদের গুরুতর জখমের ঘটনাকে অশুভ আগামীর ইঙ্গিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- আমরা যেন জাতির গোরস্থানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এই চূড়ান্ত দুঃসময়ে জনমনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠছে, সরকার কী করছে? যেসব দেশে এসব শক্তির উত্থান ঘটে সেসব দেশকে তারা নিয়ে যায় একেবারে  কিনারায়।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়া উপরোক্ত মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্বরোচিত এই ঘটনা মানবতাবোধশূন্য, অন্ধ হিংস তা ও বিকৃত পশুপ্রবৃত্তি। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতেই এসব জঙ্গি অন্ধশক্তির সৃষ্টি হয়। অবরুদ্ধ নীরব অন্ধকারের সুযোগে হিংস  অন্ধশক্তি রাষ্ট্রবিনাশী কাজে ধেয়ে আসে। কিন্তু মধ্যযুগীয় এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ বন্ধে ভোটারবিহীন বর্তমান সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে একদলীয় অপশাসনে গণতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটেছে। আর এই শক্তিকে প্রতিহত করতে না পারলে জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা ভাবনা-চিন্তাহীন, কল্পনাহীন এবং স্বপ্নহীন হয়ে পড়বে। বিএনপি প্রধান বলেন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ধর্মগুরুকে ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যা ও অন্য পূজারিদের গুরুতর জখমের আতঙ্ক সঞ্চারি ঘটনা অশুভ আগামীর ইঙ্গিত বহন করে। দেশে সম্প্রতি ইতালির নাগরিক তাভেলা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু হয়েছে এই নিষ্ঠুরতম বর্বর পরিকল্পনার যাত্রা। এই হত্যাকাণ্ড গত পরশু পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে গিয়ে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে যেমন বিদেশি আছেন, তেমনি আছেন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ও ধর্মাচার্য, ব্লগার, প্রকাশকসহ বেশকিছু মানুষ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, কয়েক মাস ধরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকার নির্বিকার, হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহাই সরকার করতে পারেনি। এসব মধ্যযুগীয় রক্তপাত থামাতে ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রাণবিনাশী আক্রমণ প্রতিহত করে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের ধরা তো দূরে থাক-উল্টো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো এবং নেতা-কর্মীদের নামে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। বিএনপি প্রধান বলেন, জঙ্গি তত্পরতা পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা দেশে সাম্প্রতিক নৃশংস ঘটনাগুলোতে একটি জঙ্গি সংগঠনের দায় স্বীকারের বার্তার বিষয়ে বার বার উল্লেখ করলেও সরকার সেটিকে পাত্তা দেয়নি। সরকার এখন  দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এটি মিথ্যাবাদী রাখালের ‘বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে’ চিত্কারের চারিত্রিক লক্ষণ। সত্যি সত্যি হিংস  নেকড়ে এসে পড়েছে কিনা, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসনে জনগণকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভারী পাথর দিয়ে চেপে রাখলেও চরমপন্থি জঙ্গি অন্ধশক্তির উত্থান ঘটার আশঙ্কায় দেশের উত্কণ্ঠিত নাগরিক সমাজ আগেই বার বার অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেই জঙ্গি নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার নেতারা বিএনপিকে জড়িয়ে বাংলাদেশে জঙ্গির অস্তিত্বের কথা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রেখেছেন। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই আলট্রা  প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছেন তারা। অথচ বিএনপির আমলেই দ্রুত তত্পরতার মাধ্যমে জঙ্গিদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি সৃজিত হয়ে আসছে। এদেশে বিদেশি বা ধর্মগুরু হত্যা, উপাসনালয়ে হামলা, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত দুর্বৃত্তরা মানবতা, সভ্যতা ও আধুনিক রাষ্ট্রের বিরোধী। পঞ্চগড়ের শ্রীশ্রী সন্ত-গৌড়ীয় মঠে হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, ধিক্কার ও নিন্দা জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়ে নিহত পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়ের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং মঠের আহত পূজারিদের সুস্থতা কামনা করেন।

সর্বশেষ খবর