রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

গ্রামের মানুষ বোঝে না সেক্যুলারিজম মৌলবাদ কী

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রামের মানুষ বোঝে না সেক্যুলারিজম মৌলবাদ কী

সাখাওয়াত হোসেন

গ্রামের মানুষ সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মৌলবাদ এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বোঝে না। শহরের মানুষের কাছে মৌলবাদের যে অর্থ, গ্রামের মানুষের কাছে তা এক নয়। গ্রামের মানুষকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে গ্রাম পর্যায়ে সভা-সেমিনার হওয়া উচিত বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন (অব.)। গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে বিদেশি হাত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

এই  নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। আমি মনে করি যে, ইসলামের সঙ্গে মৌলবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মৌলবাদ বলতে আমরা যা বুঝি তার সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে যে মৌলবাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা এক নয়। গ্রামে মৌলবাদ শব্দটির উল্টো অর্থ বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু মৌলবাদের অর্থ অন্য কিছু। এটি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে এখন ডিমোটিভেটেড বা বিপথে নেওয়া হচ্ছে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা যে ‘সেক্যুলারিজম’-এর কথা বলি তা দিয়ে গ্রামবাসী আসলে কী বোঝেন? কেন শুধু রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারেই জঙ্গিবাদ বিষয়ে আলোচনা হবে। কেন আমাদের দাদা বা নানা বাড়িতে অর্থাৎ গ্রামের মানুষের জন্য এবং তাদের বোঝানোর জন্য জঙ্গিবাদ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে না। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত আরও বলেন, আমাদের দেশে অল্প-বিস্তর যাই হোক না এবং নিয়ন্ত্রিত হোক বা অনিয়ন্ত্রিত হোক জঙ্গিবাদ নিয়ে সমস্যা আছে। তা বড় হতে পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। অর্থাৎ আমাদের দেশে এটি আছে। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমার কাছে অনেকেই জানতে চান যে, বাংলাদেশে আইএস (ইসলামিক স্টেট) আছে কি নেই। আইএস জিনিসটা আসলে কী। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আইএস কি একটি কম্পোজিট বডি যাকে বাংলাদেশে থাকতেই হবে। কিংবা তাদের কোয়ার্টার এখানে বানাতে হবে? আইএস ও আল-কায়েদা এগুলো এক ধরনের আদর্শে বিশ্বাসী। আর আইএসের যে আদর্শ তা যদি এখানকার কোনো ছোট সংগঠনও ব্যবহার করে থাকে তবে ধরে নিতে হবে আদর্শিকভাবে সেই সংগঠন আইএসের সঙ্গে জড়িত।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আছে। আইএসের আদর্শের মধ্যে আছে তারা ত্রুসেডের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর ত্রুসেডের বিপক্ষে যারা আছেন তারা হলেন ত্রুসেডার। আর ত্রুসেডের পক্ষে যারা ইসলামিক রাষ্ট্র বলে কথিত তারা হচ্ছেন ত্রুসেডের সহযোগী। যুদ্ধে লড়াই করার আইএসের তত্ত্ব এটি। এর ফলে সিরিয়ায় তারা আক্রমণ করে। আরেকটি বিষয় আমরা দেখেছি ‘খোরাসান ব্রিগেড’। যারা আইএসকে রিপ্রেজেন্ট করে। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এখন যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে না তারা আইএসের মূল টার্গেট। মুরতাদ ও ত্রুসেডাররা তাদের মূল টার্গেট। বাংলাদেশে যে দুজন বিদেশিকে হত্যা করা হয় তাদের বলা হয় ত্রুসেডার। আর জেএমবি ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা মুরতাদ বলছে। আর এর ভিতরে শিয়া, সুফিবাদী, ওহাবিয়া সব মতবাদে বিশ্বাসীরা আছেন। আমি মনে করি আমাদের গভীরভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মতো একটি সেক্যুলার দেশেও ‘কাভিতা নুসানতারা’ নামে একটি সংগঠন আইএসের সঙ্গে কাজ করছে। আমার কথা হচ্ছে মালয়েশিয়ার মতো একটি মধ্য আয়ের এবং সেক্যুলার দেশে যখন আইএস সক্রিয় আছে তখন আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।

সর্বশেষ খবর