সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রার্থিতা ধরে রাখতে মরিয়া বিদ্রোহীরা, শঙ্কায় স্বতন্ত্ররাও

ইউপিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২ মার্চ

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। অস্ত্রের মুখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য লিখিত নেওয়া হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কোন দলের তাও দেখা হচ্ছে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের (বিদ্রোহী), বিএনপি ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ওপর এমন চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে। আগামী ২ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় গতকালও কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে জোর করে প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরাও সব ধরনের চাপ মাথায় নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এমনকি দলের বহিষ্কার হুমকিও তাদের টলাতে পারছে না। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের ৭৩৮ ইউপির মধ্যে ২৫ ইউপিতে শুধু আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন; যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ৩৬টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শুধু এসব ইউপিতেই নয়, আরও কিছু ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীকে প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে ইসিতে। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তসলিমা বেগম। একই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মেহেদী হাসান। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়নে প্রার্থী রয়েছেন এ দুজন। সম্পর্কে তারা মা-ছেলে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা গেলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন মা তসলিমা বেগম। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে বুধবার। ২ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। এরই মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বাবা-মা চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ছেলে মেহেদী হাসান। তার বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান। একইভাবে জেলার মোরেলগঞ্জে কয়েকটি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে মরিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, নৌকা প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী এই পদ্ধতিতে বেশ এগিয়েছেন। তেলীগাতি, দৈবজ্ঞহাটি, হোগলাপাশা, রামচন্দ্রপুর ও পঞ্চকরণ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা চলছে।

এর মধ্যে তেলীগাতি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীকে অস্ত্রের মুখে প্রত্যাহার পত্র লিখিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। তিনি এখন সপরিবারে এলাকাছাড়া। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধাসহ নানা অভিযোগ নিয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপি প্রার্থীদের বাধা এবং বাসাবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। গত পৌরসভা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের দল থেকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ নোটিসও দেওয়া হয়েছে। দলের আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা গেছে, এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৬টি রাজনৈতিক দলের ১৯০০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ১৬৬৮ জন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত এক-তৃতীয়াংশ দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ খবর