শিরোনাম
রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মায়ের আচরণে বিস্মিত পুলিশচিকিৎসকরা বলছেন ‘অসুস্থ’

বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মায়ের আচরণে বিস্মিত পুলিশচিকিৎসকরা বলছেন ‘অসুস্থ’

‘ভাই, দুপুরে আমারে শোল মাছের তরকারি দেওয়া যাবে?’ শুক্রবার দুপুরে খাবার দেওয়ার আগে রামপুরা থানার হাজতখানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে এ কথাটি বলছিলেন দুই সন্তান হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার মাহফুজা মালেক জেসমিন। সকালে নাস্তা খাওয়ার পর এবং বিকালে নিয়ম করেই চা পান করতে চাইছেন তিনি। এর      বাইরে তিনবেলাই ভাত খাচ্ছেন জেসমিন। চাহিদামতো খাবার না পেলেই করছেন চেঁচামেচি। নামাজ পড়ার জন্য তিনি চাইছেন জায়নামাজ। বনশ্রীতে দুই সন্তান হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ও পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা মাহফুজা মালেক জেসমিনের এমন আচরণে রীতিমতো বিস্মিত থানার পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদস্যরা বলছিলেন, বহুবার খুন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের পর তাদের মধ্যেও অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। তবে রীতিমতো ব্যতিক্রম জেসমিন। নিজ সন্তানদের খুন করার পর তিনি স্বাভাবিক আছেন কীভাবে— এমন প্রশ্ন তাদের।

বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় অনেক মানুষের ভিতর এক ধরনের অবস্থা তৈরি হয়। এতে করে ওই ব্যক্তি নিজেই নিজের ক্ষতি করে, নইলে অন্য কারও ওপর দিয়ে তার ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে ‘ডিপ্রেশন অব এংক্সাইটি’ বা ‘ডিপ্রেশন অব অ্যাগ্রেশন’। তিনি বলেন, জেসমিনের কর্মকাণ্ড খুব স্বাভাবিক মনে হলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ। তার অনুভূতিগুলো বর্তমানে কাজ করছে না। নিজের সন্তানদের হত্যা করার পর তার এমন স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। জেসমিনের পরিবারের ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যাবে, কোনো সদস্য অনেকটা তার মতো ছিলেন বা আছেন। তবে তিনি কী কারণে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তদন্ত কর্মকর্তার। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের পেছনে এখন পর্যন্ত নিজের হতাশার কথাই বলছেন গ্রেফতার জেসমিন। এখনো অন্য কারও সম্পৃক্ততার বিষয়টি পাওয়া যায়নি। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে অনেকটা একই কথা বলছেন জেসমিন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মনে হচ্ছে একই বৃত্তে ঘুরছে তার বক্তব্য। র‌্যাব হেফাজতে ও আমাদের কাছে দেওয়া বক্তব্য অনেকটা একই রকম। পুলিশ হেফাজতে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমসহ সব কাজ স্বাভাবিকভাবেই করছেন তিনি, যা সাধারণত একজন সন্তানহারা মায়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে না।’ পুলিশ হেফাজতে থাকা একজন সাধারণ আসামি এমন আচরণ করে থাকে, এর আগে কখনো দেখা যায়নি বলে জানান তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

পরকীয়া বা অন্য কোনো নারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝির বলি দুই শিশু কি না— এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার র‌্যাব জেসমিনকে তাদের কাছে হস্তান্তর করে। এর পর থেকে তাকে যতবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, স্বামীর পরকীয়া বা খারাপ আচরণের কারণে দুই সন্তান খুন করা হতে পারে এমন কোনো কথাই বলেননি জেসমিন।

সর্বশেষ খবর