মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির শীর্ষ পদে দুই আসামি

সোহরাওয়ার্দীর বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির শীর্ষ পদে দুই আসামি

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি দলের শীর্ষ দুই পদে দুই আসামিকে নির্বাচিত করেছে। একজন এতিমদের টাকা চুরির মামলার আসামি। অন্যজন গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি। গতকাল বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখলাম বিএনপির চেয়ারম্যান (চেয়ারপারসন) ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হলো। নাটকটা ভালোই করেছে। কাকে নির্বাচিত করা হলো? দুজনই আসামি। একজন এতিমের টাকা আত্মসাত্ মামলার আসামি। আরেক জন তো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা— যেখানে আইভি রহমানসহ অনেককে হত্যা করা হয়, মানিলন্ড্রারিং দুর্নীতির মামলার পলাতক আসামি। সে পলাতক আসামির নাম ইন্টারপোলে। ইন্টারপোলে যার নাম আসামি হিসেবে... ওয়ান্টেড হিসেবে আছে সে হলো বিএনপির নেতা। তাহলে সে দল মানুষকে কী দেবে! বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ। সে দল মানুষকে কী দেবে— যার জন্মই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশে লুটপাট, দুর্নীতি, হত্যা আর সন্ত্রাস হয়। তারা এ দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রহমতুল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহানগরের কামাল আহমেদ মজুমদার, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, কৃষক লীগের খন্দকার শামসুল হক রেজা, ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের দিনটি যথাযথভাবে পালন করতে এই জনসভার আয়োজন করা হয়। বিকাল ৩টায় জনসভা শুরুর সময় থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাস্থলে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়ন এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। তাদের হাতে কাঠের কামান ও জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি দেখা যায়। বেলা ২টা বাজার আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়াও রাজধানীর দলীয় এমপিরাও কর্মী বাহিনী নিয়ে মিছিলে উপস্থিত হন। সাড়ে ৩টায় মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২৫ মিনিট বক্তৃতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের তাত্পর্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপক সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছেন। আর এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন খালেদা জিয়া। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাত্ করে পরাজিতদের চেতনা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

খালেদার বিচার হবে : খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করেছেন। সেই আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বন্ধ করার আন্দোলন। তিনি (খালেদা জিয়া) বললেন, সরকার উত্খাত না করে ঘরে ফিরবেন না। সেসময় আড়াইশ মানুষ হত্যা করেছেন। খালেদার আগুন থেকে কেহ রেহাই পাননি। কী অপরাধ ছিল মানুষের? কেন মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন তার জবাব একদিন বাংলার মানুষের কাছে খালেদা জিয়াকে দিতে হবে। এর বিচারও হবে বাংলার মাটিতে।

খেলাধুলায় বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে : সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রানারআপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছি, রানারআপ হয়েছি। সামনে আরও বহুদূর যাব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ ঠিকই পারেনি। খেলায় এখন বাঙালিকে হিসাব করে বিশ্বের মানুষ। আমি চাই, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ এই চেতনা নিয়েই এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশে মর্যাদা পেয়েছে। এদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আজ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে।

৭ মার্চের ভাষণ শুনলে মানুষ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের তাত্পর্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ শুনলে এখনো মনপ্রাণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। এই ভাষণেই তিনি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে মুক্তি সংগ্রামের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারপর ধাপে ধাপে জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে এগিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ২৬ মার্চ রাতে জাতির পিতা তত্কালী ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান ঘোষণা করেন, পরবর্তীতে অন্যান্য জেলা নেতারাও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্বের আড়াই হাজার ভাষার মধ্যে অন্যতম সেরা ভাষণ। ইতিমধ্যে এটি ১২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরও ভাষায় অনুবাদ করা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ভাষণ বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই ভাষণ বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই ভাষণ বাজাতে দেওয়া হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : এর আগে ভোরে ধানমন্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এ ছাড়া মহিলা শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটি, যুব শ্রমিক লীগ, মত্স্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, জাতীয় বিদ্যুত্ শ্রমিক লীগ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু লেখক সমিতি, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোট, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ফোর্স অব বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ প্রভৃতি সংগঠন।

সর্বশেষ খবর