বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নৃশংসতার নির্মম সাক্ষী ডালিম হোটেল

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই হিন্দু মালিকাধীন মহামায়া ভবন দখল করেন মীর কাসেম আলী। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আলবদর বাহিনী ভবনটির নাম দেয় ‘ডালিম হোটেল’। এ হোটেলে চলতে থাকে মুক্তিকামী মানুষদের নির্যাতন। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত বাঙালিকে ডালিম হোটেলে ধরে এনে    নির্যাতন করা হতো। এদের বেশির ভাগই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক দিন পরও ডালিম হোটেলের আশপাশ এলাকায় অসংখ্য লাশ পড়ে ছিল। ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাংবাদিক নাছিরুদ্দিন চৌধুরী, ন্যাপ নেতা সাইফুদ্দিন খান, তৎকালীন জেলা ন্যাপের সভাপতি এ এন নূরুন্নবী, ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা অরুণ কুমার চৌধুরী ও শফিউল আলম চৌধুরী, ড. ইরশাদ কামাল খান, ড. মোসলেহ উদ্দিন খান, জেলা ন্যাপের তৎকালীন নেতা অ্যাডভোকেট শফিউল আলম (বেবী শফি), জাহাঙ্গীর চৌধুরী, তৎকালীন চীনপন্থি ন্যাপ নেতা মো. সেলিম ও মেজবাহ খান।

কে এই মীর কাসেম : মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মীর কাসেম ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র সংঘের সভাপতি। হত্যা ও নির্যাতনে পারদর্শিতার পুরস্কার হিসেবে তাকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। তখন মীর কাসেম আলী এ বাহিনীর তিন নম্বর ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মীর কাসেম সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংঘকে ছাত্রশিবিরে পরিণত করা হলে মীর কাসেম আলীকে দেওয়া হয় সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব।

টর্চার সেল অধিগ্রহণের দাবি : ডালিম হোটেলসহ আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রামের সব টর্চার সেল অধিগ্রহণ করে মৃক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি উঠেছে। মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর অর্থের জোগানদাতা ও আলবদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখার পর ফের এ দাবি ওঠে চট্টগ্রামে। প্রজন্ম-’৭১ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে ডালিম হোটেলসহ সব টর্চার সেল অধিগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এ টর্চার সেলগুলোতে গিয়ে আগামীর প্রজন্ম জানতে পারবে, কত অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছে রাজাকাররা। টর্চার সেলগুলো অধিগ্রহণে প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’ মুক্তিযুদ্ধ-গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলবদর বাহিনী ডালিম হোটেল, গুডস হিলসহ বিভিন্ন টর্চার সেলে হাজার হাজার বাঙালিকে ধরে এনে হত্যা ও নির্যাতন করে। আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হলে এ টর্চার সেলগুলো সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করতে হবে।’ প্রয়াত ন্যাপ নেতা সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী নারীনেত্রী নূরজাহান খান বলেন, ‘ডালিম হোটেলে সাইফুদ্দিন খানকে ১২ দিন আটকে রেখে মীর কাসেম আলী অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আলবদর বাহিনী ওই সময় হাজার হাজার বাঙালিকে ধরে এনে লোহার রড ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন চালায়। ডালিম হোটেলসহ চট্টগ্রামের সব টর্চার সেল অধিগ্রহণ এখন সময়ের দাবি।’

আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ : মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখায় চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল রায় বহাল রাখার ঘোষণা আসার পর থেকে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ শুরু হয়। সকালে গণজাগরণ মঞ্চের মিছিলে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সদস্যসচিব চন্দন দাশ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, শরীফ চৌহান, নারীনেত্রী নূরজাহান খান, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি সুনীল ধর, মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর