সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিএনপির কাউন্সিল আর মাত্র ৫ দিন বাকি

নেতাদের ঘুম হারাম

জীবনবৃত্তান্ত বানানোর হিড়িক

মাহমুদ আজহার

ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে সম্প্রতি দেখা গেল বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতার কার‌্যালয়ে। হাতে তিন পৃষ্ঠার এক কপি নতুন বায়োডাটা। সঙ্গে কিছু পত্রিকার কাটিং। বিগত আন্দোলনে পত্রিকায় ছাপানো ছবিসহ প্রতিবেদন নিয়ে হাজির। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সম্পাদকীয় পদ দাবি তার। বর্তমান নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্যকে দেখা যায় বিএনপির সিনিয়র এক নেতার বাসায়। তার হাতেও বিশাল এক জীবনবৃত্তান্ত। প্রমোশন চাই। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব নেতাই পদ চান, প্রমোশন চান। এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চলছে। ঘাম ঝরছে। নির্ঘুম রাত কাটছে অনেকের। নির্বাহী কমিটির পদপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা জানান, রাজনৈতিক বায়োডাটা তৈরি করতে তার ঘাম ঝরছে। এতে বিগত আন্দোলনের সময় কর্মকাণ্ড যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অতীতে ছাত্রদলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও যুক্ত করা হয়েছে। বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হাতে বায়োডাটা পাঠানো হয়েছে। কোনো এক মাধ্যমে লন্ডনেও বায়োডাটা পাঠানোর দাবি তার। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাহী কমিটিতে এবার তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন। জানা যায়, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তরুণ নেতারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ করছেন। পছন্দসই পদও প্রত্যাশা করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি নিজের ছবি সংবলিত পোস্টারও প্রকাশ করার প্রতিযোগিতা চলছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদের জন্য নিষ্ক্রিয়রাই বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে কাউন্সিলে তারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না। সক্রিয়দের সামনের সারিতে নিয়ে আসা হবে। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে যারা দলের ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে ছিলেন, তারাই যোগ্য স্থানে যাবেন।’ জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা ২১ জন হতে পারে। মৃত্যুজনিত কারণে নতুন তিনজনকে নিয়ে আসা হবে। অসুস্থজনিত কারণে আরও দুজন যুক্ত হতে পারেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে যেতেও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ চলছে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাবশালী এক তরুণ নেতাকে ফোন করে স্থায়ী কমিটিতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বলতেও অনুরোধ করেন তিনি। পরে ওই তরুণ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই হলো সিনিয়র নেতাদের অবস্থা। নিজের পদের জন্য ছোটদের অনুরোধ করতেও দ্বিধা করেন না। সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব পদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবও এসেছে। এ পদেও বিএনপির দুই নেতার নাম শোনা যায়। যুগ্ম মহাসচিব পদের সংখ্যা ১০ জন করার প্রস্তাব এসেছে। এ পদে নতুন করে অন্তত দেড় ডজন নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক পদেও ২০ জন নেতার অন্তর্ভুক্তি করার দাবি এসেছে। বিএনপির তিন ডজন নেতা ওই দুই পদে জায়গা করে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, অনেকটা গোপনীয়ভাবেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থান নেওয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। বিষয়ভিত্তিক কমিটিও তৈরি করেছেন। কমিটিতে নিষ্ক্রিয়দের সাইড লাইনে রাখা হচ্ছে। সামনের সারিতে রাখা হচ্ছে সক্রিয়দের। বিগত আন্দোলনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা পেয়েছেন—তাদেরকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ছাত্রনেতাদের সাবেক নেতাদের বড় একটি অংশই বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কোনো পদে নেই। তাদের নতুন নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর