শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি

দীর্ঘ ছয় বছর পর আজ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও গতকাল বিকালে টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানালেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। সব মতভেদ ভুলে সবাই এক প্লাটফর্মে দাঁড়াবে। দলকে আরও গতিশীল ও সুসংহত করাই আমাদের লক্ষ্য, যা আগামী দিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কাউন্সিল প্রস্তুতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নতুন নেতৃত্বের সামগ্রিক দিক নিয়ে সাক্ষাত্কার আকারে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদ আজহার।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ছয় বছর পর কাউন্সিল হচ্ছে আপনার মূল্যায়ন কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা। কিন্তু সরকারের হামলা-মামলা, জুলুম-নির্যাতনের কারণে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও কাউন্সিল করতে পারিনি। ২০১৩ সালে আমরা কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু সরকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আমাকেসহ ১৫৪ জন নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সব ডকুমেন্ট গায়েব করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। তাই কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। এখনো হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। খোদ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার খড়গ ঝুলছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কাউন্সিল করছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ওয়ান-ইলেভেনের মতো কঠিন সময় মোকাবিলা করতে হয়েছে। দল পরিচালনায় কিছুটা হোঁচট খেতে হয়েছে। কিন্তু দল থেমে যায়নি। ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমেও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। বিএনপিকে যতবারই ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে, ততবারই ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এই দলকে নির্মূল কিংবা ধ্বংস করা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। বিএনপিকে নির্মূল করতে চাইলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কাউন্সিলের প্রস্তুতি পুরোপুরি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : বেশ কয়েক দিন ধরেই আমাদের  উপকমিটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নেতারা। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনকেও প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কাউন্সিল চত্বর। বিএনপির সব নেতা-কর্মীর চোখ এখন কাউন্সিলের দিকে। অদম্য উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায় থেকেও কাউন্সিলকে সফল করার  চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী, কাউন্সিল সফল হবে। এক্ষেত্রে আমরা সরকারেরও সহযোগিতা চাই। আশা করি, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন নির্বিঘ্নে আমাদের কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে দেবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে বলুন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ইতিমধ্যে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। শীর্ষ এই দুই নেতাকে অভিনন্দন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তবে এবার যারাই নেতৃত্বে আসুক, দল আরও গতিশীল হবে। আন্দোলনে ত্যাগী ও দক্ষ নেতারা সামনের সারিতে থাকবেন। অতীতে বিএনপির সাংগঠনিক কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল না— তা বলা যাবে না। আমরা ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে পথ চলতে চাই। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি আবার জেগে উঠবে। সংগঠনে উদ্যম ফিরে আসবে যা পরবর্তীতে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : এখন বিএনপি কাউন্সিল সফল করা নিয়েই ভাবছে। কাউন্সিলের পর নতুন নেতৃত্ব আসবে। সাংগঠনিক কাঠামোগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। তৃণমূলে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আন্দোলনে আছি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যাওয়া ও দলকে শক্তিশালী করা আন্দোলনেরই একটি অংশ। সাধারণ মানুষের কাছে আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছি। দেশবাসীও আমাদের পক্ষে। যতদিন না মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে আসবে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চলবেই ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : শীর্ষ নেতাদের মামলার কী অবস্থা?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : বিএনপি একটি কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে নির্মূল করার চেষ্টা চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৩১টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এমন  কেউ নেই, যাদের নামে ১০ থেকে ৯০টির অধিক মামলা  নেই। গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়েও নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা করে বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারপরও এ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীই উদ্বিগ্ন নন। সরকার যত মিথ্যা মামলা ও নির্যাতন করুক না কেন, কাউন্সিলের পর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেই ঘরে ফিরবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যেই বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। সব সময়ই ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে বিএনপি। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা সৃষ্টি করার জন্য বিএনপিকে একটি জ্ঞানভিত্তিক রাজনৈতিক দলে পরিণত করতে হবে। কাউন্সিলে সেটাই বিএনপির অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। দলের সব পর্যায়ে  যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি রাজনৈতিক দলকে সরকার গঠনের প্রস্তুতি রাখতে হয়। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। বিষয়ভিত্তিক বিশেষ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। শিগগিরই বর্তমান সরকারের সব কাজ মনিটর এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর