মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

তুলনাহীন মাশরাফি

খালেদ মাসুদ পাইলটের কলাম

তুলনাহীন মাশরাফি

তাসকিন আহমেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে যেভাবে কথা বলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা তাতে আমি মুগ্ধ। একজন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অধিনায়কের এমন হওয়াই উচিত। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। অস্ট্রেলিয়ায় যখন মুত্তিয়া মুরলিধরনের বোলিংকে চাকিং ধরা হচ্ছিল, আম্পায়ার ‘নো’ বল ডাকছিলেন, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছিল মুরলিধরনের। অধিনায়ক রানাতুঙ্গা তখন বাবার মতো, বড় ভাইয়ের মতো, বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুরলিধরনের। রানাতুঙ্গার উৎসাহে, সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়ান মুরলিধরন। শুধু ঘুরে দাঁড়াননি, ক্যারিয়ারটাকেও দীর্ঘ করেন। আমি জানি না রানাতুঙ্গার সহযোগিতা করার বিষয়টি মাশরাফি জানেন কি না। না জানলেও তিনি যেভাবে তাসকিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। হ্যাটস অব মাশরাফি। মাশরাফি অসাধারণ একজন নেতা। অসাধারণ একজন অধিনায়ক। অসাধারণ মানসিকতার একজন ক্রিকেটার। নেতার মতো তার বন্ধুর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। একজন অধিনায়ক হিসেবে বিপদে পড়া সতীর্থকে সাহস যুগিয়েছেন। একজন ক্রিকেটারের মতো লড়াই করার আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন। আমার মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি। ক্রিকেট দলেও ব্যাপক জনপ্রিয়। আমি যতটুকু জানি, প্রতিটি ক্রিকেটারের সঙ্গেই তার আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ। সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। ক্রিকেটারদের সবধরনের কাজে পাশে দাঁড়ান। মাশরাফির এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে ক্রিকেটাররা সবাই মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। কারণ, তারা সব সময় মনে করে, বিপদ-আপদে অধিনায়ককে পাশে পাবেন। গত এক বছর ধরে দারুণ ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফিরা। একটি টিম হয়ে খেলছেন। একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খেলছে বলে নিজেদের মধ্যে তাদের বোঝাপড়াটাও খুব ভালো। ছন্দ এসে পড়েছিল ক্রিকেটারদের। এমন সময়ে তাসকিন, আরাফাত সানির নিষেধাজ্ঞা বড় ধাক্কা দিল ক্রিকেটটাকে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দুজনেই ফিরবেন। আমি অবশ্য আরাফাত সানিকে নিয়ে একটু সন্দিহান। আমার জানা মতে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি তার। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ই সে বড় বড় ক্লাবে খেলেছে। তার বিপক্ষে অভিযোগ থাকলেও প্রভাবশালী ক্লাবগুলোর সহযোগিতায় কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসে তার বোলিং নজরে পড়েছে। তাই আম্পায়াররা নজর দিয়ে তার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি চাই সে পরীক্ষা দিয়ে ক্রিকেটে ফিরে আসুক। তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জোর ধাক্কা দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। তবে আমি যতুটুকু জেনেছি ও শুনেছি, তাতে তাসকিনের ফিরে আসতে কোনো সমস্যা হবে না। বাউন্সার মারার সময় তার অ্যাকশন নিয়ে যে সমস্যা, সেটা ঠিক করে নেওয়া কোনো বিষয় নয়।

তবে একটি বিষয় সবার জেনে রাখা উচিত, কোনো বোলার যখন নিষিদ্ধ হন, সেখান থেকে ফিরে আসাটা কষ্টকর। সোহাগ গাজি, আবদুর রাজ্জাকরা কিন্তু পুরনো ছন্দে ফিরতে পারেননি। আমি চাইব তাসকিন তার সমস্যা কাটিয়ে পুনরায় ক্রিকেটে ফিরুক। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট লাভবান হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর