শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

পদের টেনশনে ঘুম হারাম বিএনপি নেতাদের

এ মাসেই হতে পারে মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটি

শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার

পদের টেনশনে ঘুম হারাম বিএনপি নেতাদের

দিন যতই গড়াচ্ছে বিএনপিতে টেনশন ততই বাড়ছে। কাউন্সিলের পর নেতা-কর্মীরা এখন কমিটির অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে আছেন। কবে নাগাদ নির্বাহী কমিটি দেওয়া হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে পদ প্রত্যাশীদের ঘুম হারাম। তদবিরে ঢাকা-লন্ডন কোনোটাই বাদ রাখছেন না নেতারা। প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় ধরনা দিচ্ছেন। ঢাউস নির্বাহী কমিটিতে জায়গা পেতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের তরুণ নেতারাও দৌড়ঝাঁপ করে ঘাম ঝরাচ্ছেন। পদোন্নতি প্রত্যাশীরাও বসে নেই। অবশ্য দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয়রা।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, চলতি মাসেই বিএনপির মহাসচিব ও ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা হতে পারে। দুই-একদিনের মধ্যেই আংশিক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবসহ ৭ সদস্যের যুগ্ম-মহাসচিবের তালিকাও প্রকাশ পেতে পারে। বিএনপির এক নেতা জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আংশিক কমিটি হতে পারে। মে মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কমিটি ঘোষণার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। ১৯ মার্চের জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি গঠনের ব্যাপারে দলীয় চেয়ারপারসনকে একক দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি এখন শুধু তার এখতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যত শিগগিরই সম্ভব বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কমিটি ঘোষণা করবেন। আশা করি, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করবেন। এ নিয়ে কারও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ভুল ব্যাখ্যারও কোনো অবকাশ নেই। কমিটি গঠনের এখতিয়ার কাউন্সিলররা বিএনপি চেয়ারপারসনকেই দিয়েছেন।’ দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কমিটি নিয়ে কথা বলছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের সিনিয়র গুটিকয়েক নেতার সঙ্গেও কমিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে সবারই মুখ খুলতে মানা। নির্বাহী কমিটি গঠনে তৃণমূল থেকে নেতাদের নাম ও বায়োডাটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের কাছে জমা হওয়া বায়োডাটাগুলোও বেগম জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তিনি এগুলো নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কার কী ভূমিকা ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আন্দোলনে থাকা নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেগম জিয়া। লন্ডনে তারেক রহমানের কাছেও যাচ্ছে নেতাদের আমলনামা। 

গত ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি ঘোষণা না করায় বিষয়টি নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। কমিটি কি ঝুলে যাবে, এমন প্রশ্নও অনেকের। এ অবস্থায় তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তবে দলের স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য জানান, হতাশার কিছু নেই। কাউন্সিলে বিএনপির কমিটি হয় না, এটাই রীতি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মির্জা আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবসহ নতুন স্থায়ী কমিটির ১৯ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। মাসখানেক পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। সূত্রমতে, বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে ১৪ জনই টিকে যেতে পারেন। বাকি পাঁচটি পদে আসবে নতুন মুখ। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. আর এ গণি ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হয়েছে তিনটি পদ। গুরুতর অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণে স্থায়ী কমিটির আরও দুটি সদস্য পদে নতুন মুখ আসতে পারে। মির্জা ফখরুল মহাসচিব হলে পদাধিকার বলেই স্থায়ী কমিটির সদস্য হবেন। বাকি ৪টিতে জায়গা পেতে অন্তত একডজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। জানা যায়, যুগ্ম-মহাসচিব পদেও আসতে দেড় ডজন নেতার দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক পদের নেতারাও এ পদে আগ্রহী। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পাদকীয় পর্যায়ের নেতারাও এ পদে যেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির অন্যতম লোভনীয় পদ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। এ পদেও আগ্রহী অন্তত তিনজন নেতা।  

বিএনপির কাউন্সিলে প্রথম মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৫টি উপ-কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একজন সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রতিটি কমিটিতে সদস্য সংখ্যা হবে ১২ জন করে। নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য সংখ্যা ১৭ থেকে ৩৫ জন করা হচ্ছে। উপদেষ্টা চেয়ারপারসন যত খুশি দিতে পারবেন। কারণ এটি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। যুগ্ম-মহাসচিব পদে ৭ জনই থাকছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতি বিভাগে একজন করে। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক থাকবেন প্রতি বিভাগে দুজন। এর বাইরে ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক তিনজনের পরিবর্তে চারজন করা হয়েছে। পরিবার ও কল্যাণে একজন সম্পাদক ও দুজন সহ-সম্পাদক থাকবেন। ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক নতুন সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ সহ-সম্পাদক একজনের জায়গায় দুজন, গণশিক্ষা, স্বনির্ভর, বন, জলবায়ুসহ যেসব সম্পাদকীয় পদে সহ-সম্পাদক নেই প্রত্যেকটিতে একজন করে সহ-সম্পাদক থাকবেন। সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক থাকবেন সাতজন। এখন থেকে কাউকে বহিষ্কার করতে চেয়ারপারসন বা স্থায়ী কমিটির অনুমোদন লাগবে। ২৫টি উপ-কমিটির মধ্যে রয়েছে— অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজ সম্পদ, মানবাধিকার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষুদ্র ঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি। নির্বাহী কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা হবে— এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নতুন কমিটি গঠনের জন্য দলের জাতীয় কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এককভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারও করেছেন কাউন্সিলররা। কাজেই বিষয়টি এখন শুধু তারই এখতিয়ারাধীন। আমার বিশ্বাস আগামী সপ্তাহের মধ্যেই স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। আর নির্বাহী কমিটি গঠনে আরেকটু সময় লাগবে। এবারের কমিটি একটু বড় আকৃতিরই করা হতে পারে। গত কয়েক বছরের ‘নেতৃত্ব জটের’ কারণে অনেককেই এ কমিটিতে স্থান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর