শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাকশালে যোগ দেন জিয়া

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাকশালে যোগ দেন জিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ গ্রহণ করে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অভিমান থাকার পরও জিয়া কোনো দিন তাকে অশ্রদ্ধা করেননি। বরং আমরা দেখেছি— জিয়া বঙ্গবন্ধুর আনুগত্য হয়েই সেদিন বাকশালের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম তার লেখা ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইতে এ কথা উল্লেখ করেছেন। বইতে নিজের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাফর ইমাম আরও বলেন, জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে এখনো রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটেনি। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের জীবদ্দশায় এ নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না। তাদের দুজনের (বঙ্গবন্ধু ও জিয়া) অবর্তমানে অদ্যাবধি এ বিষয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি এমন এক মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, এই বিতর্ক ও সমালোচনা-আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষ নিজ নিজ দলের নেতাকে সবার উপরে স্থান দিতে চায়। এটা একটি অহেতুক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াস বটে। আসলে ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর জায়গায় থাকবেন, জিয়া জিয়ার জায়গায় থাকবেন। জিয়া কোনো দিন কোনো মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষে আসতে পারেন না। জিয়া বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় এবং পরেও যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন কোনো দিন এ ধরনের কোনো দাবি করেননি। জিয়া বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ না হলেও মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার  ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ইতিহাসে তার জায়গায় তিনি থাকবেন। জাফর ইমাম বলেন, ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর শুরু করল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যাসহ চরম নিষ্ঠুর ও নির্মম নির্যাতন। তাত্ক্ষণিকভাবে শুরু হয়ে গেল অবরোধ সংগ্রাম, তখন পুরো জাতি ছিল দিশাহারা। ২৬ মার্চ কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নানসহ কয়েকজন বেতারকর্মী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। পূর্ব প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ ও সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন যে, এ সময়ে যদি একজন সিনিয়র সামরিক অফিসারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা যায়— তাহলে বিশেষ করে ইপিআর, আনসার, মুজাহিদসহ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৪৫০০০ এর অধিক সশস্ত্র  ও প্রশিক্ষিত সদস্য একটি দিকনির্দেশনা পাবেন। তাই তারা একজন সিনিয়র সামরিক অফিসারের খোঁজে সেদিন চট্টগ্রামের ষোলশহরে যান। সেখানে ছিল ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট। এর আগে তারা ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ষোলশহরে অবস্থানরত ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসাররা তাদের প্রস্তাব শুনে বলেন, জিয়া বর্তমানে বোয়ালখালী বা পটিয়ায় ৮ম বেঙ্গলের সৈনিকদের একটি অংশের সঙ্গে আছেন। বোয়ালখালীর কুসুমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সঙ্গে জিয়ার সাক্ষাতে যুদ্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ হয়েছিল। পরের দিন জিয়া চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত প্রেরিত বার্তা পেয়ে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও বেতারের কয়েকজন কর্মীসহ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে আসেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা, বেতার কর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধিত আকারে চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তিনি জয় বাংলা বলে এ ঘোষণার সমাপ্তি টানেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে সেদিন জিয়ার এই ঘোষণা পুরো জাতিকে নতুনভাবে আবার উজ্জীবিত করেছিল। (অসমাপ্ত)- অনুলেখন শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সর্বশেষ খবর