শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত পেল বাংলাদেশ

আলী রিয়াজ

সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত পেল বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হ্যাক হওয়া রিজার্ভের একটি অংশ ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল ফিলিপাইনের বাংলাদেশ দূতাবাসে ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেন হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিশন-প্রধান প্রভাশ লামরং এ অর্থ গ্রহণ করেন। প্রতিটি ১ লাখ ডলারের বান্ডিলভর্তি একটি লাগেজে কিম অংয়ের আইনজীবী ইনোসেনিও ফেরার এ অর্থ ফেরত দেন। চুরি যাওয়া আরও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার প্রক্রিয়াধীন।

ফিলিপাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসসূত্রে জানা গেছে, আগের দিন বুধবার ফিলিপাইনের সিনেট কমিটির শুনানিতে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বক্তব্য দেন। তবে রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখা থেকে হ্যাকিংয়ের একটি বড় অংশ তার ক্যাসিনোয় গেছে। তবে সেখানে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার এখনো রয়েছে বলে স্বীকার করেন। সেই অর্থ  তিনি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ অর্থ ফেরত দেন। কিম অংয়ের আইনজীবী ফেরার ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার লাগেজে ভর্তি করে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। সেখান অর্থ গ্রহণের কাগজে স্বাক্ষর করেন দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকাই আবাদ ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জন গোমেজ। পরে এএমএলসি কর্তৃপক্ষ ফেরারকে সঙ্গে নিয়ে অর্থ নিয়ে যান বাংলাদেশ দূতাবাসে। দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব প্রভাশ লামরং বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ গ্রহণ করেন। অর্থ ফেরত দেওয়ার পর কিম অংয়ের আইনজীবী বলেন, ‘একাধিক মেশিনে ডলার গুনে অর্থের পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমার ক্লায়েন্টের চুরি করা অর্থের প্রয়োজন নেই। তিনি শুরু থেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। তাই তদন্তের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এর পরও তিনি সহযোগিতা করবেন।’ অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো কিছু জানে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো কিছু জানি না। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতাও আছে। অর্থ ফেরত পাওয়া গেছে।’ সেটা এখন কীভাবে বাংলাদেশে আসবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত নই। তবে যেভাবে অর্থ গেছে সেভাবেই আসবে। বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিলেও পেয়ে যাব।’ এদিকে, ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি ও এএমএলসি কর্তৃপক্ষের তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) জুপিটার শাখা ব্যবস্থাপক দিগুইতোকে মূল দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিনেট কমিটি ক্যাসিনো মালিক কিম অংকে শুনানিতে ডেকে অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছে।

কিম অং তার ক্যাসিনোতে এখনো আটকে থাকা ১২ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে রাজি হন। বুধবার শুনানি শেষে সিনেট কমিটির প্রেসিডেন্ট রাফ রেকটো গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৪ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে দুটি ক্যাসিনো ও রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমে ৩১ মিলিয়ন ডলার এখনো আটকে আছে। তা উদ্ধার করা যাবে। বাকি অর্থ দিগুইতোসহ কয়েক ব্যক্তির কাছে রয়েছে। এ ছাড়া লোপাট হওয়া ৪৬ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে চলে গেছে। তা উদ্ধার করা কঠিন।

সর্বশেষ খবর