শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতকে কাঁদিয়ে ফাইনালে উইন্ডিজ

মেজবাহ্-উল-হক, মুম্বাই থেকে

ভারতকে কাঁদিয়ে ফাইনালে উইন্ডিজ

কিছুতেই কান্না থামছে না দুই গালে পতাকা আঁকা সাত-আট বছরের মেয়েটির। বুঝ দিতে গিয়ে বারবার চোখ মুছছে বাবা-মাও। শুধু মেয়েটি কিংবা তার বাবা-মা কেন, ওয়াংখেড়ে জুড়েই তখন কান্নার রোল। মাঠে কাঁদছেন ক্রিকেটাররা আর গ্যালারিতে দর্শকরা। ভারতীয়দের কান্নাকে ‘নির্বাক’ মিউজিক ভেবে তখন মাঠে ছন্দে ছন্দে নৃত্যানন্দে ব্যস্ত গেইল-স্যামুয়েলসরা। ভারতকে কাঁদিয়ে সাত উইকেটে জিতে ফাইনালে উঠে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ এপ্রিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে তার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা কল্পনাকেও যেন হার মানায়। গতকাল যেমন চার চারবার নতুন জীবন পেয়ে ৮৯ রানের তাণ্ডবে ইনিংস খেলে ভারতকে ১৯২ রানের বিশাল স্কোর এনে দেন বিরাট কোহলি। আর তিন তিনবার নতুন জীবন পেয়ে ৮৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দিলেন লেন্ডল সিমন্স। আবার বল হাতে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়া আন্দ্রে রাসেল প্রতিশোধ নিলেন ব্যাট হাতে। ভারতীয় ব্যাটসম্যান তার করা চার ওভারের ২৪ বল থেকে নিয়েছেন ৪৭ রান, রাসেল ভারতীয় বোলারদের পিটিয়ে ২০ বলে করেছেন ৪৩ রান! তিন ছক্কার শিকার হয়ে ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার নিজে হাঁকিয়েছেন চারটি। ভারতীয় বোলারদের ওপর রাসেলের আক্রোশ এতটাই বেশি ছিল যে, প্রথম ছক্কায় লং অন দিয়ে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্যালারির তৃতীয় তলায়। যেটির দৈর্ঘ্য ৯৯ মিটার। আরেক ছক্কায় বল গিয়ে আঘাত করে প্রেসবক্সের গ্লাসে। অন্য দুটিও ছিল বিশাল। শুরুতে দুই ওভারের মধ্যে সেরা দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসকে হারিয়ে ব্যাটফুটে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ফিরিয়ে আসে চার্লস ও সিমন্স মিলে ৯৭ রানের জুটি গড়ে। চার্লস ৩৬ বলে ৫২ রান করে ড্রেসিং রুমে ফিরলেও সিমন্স ৫১ বলে ৮৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। তবে সিমন্সের ইনিংসটি ছিল নাটকীয়তায় ভরা। তিন তিনবার ড্রেসিং রুমের কাছে গিয়েও ভাগ্যের জোড়ে আবার ২২ গজে ফিরেছেন। দুইবার ক্যাচ হয়েও ‘নো বলে’র সুবাদে বেঁচে যান, আরেকবার ক্যাচ হয়েও ছক্কায় রক্ষা। ভাগ্য কাল ওয়াংখেড়েতে বিরাট কোহলির পক্ষে হয়েও লড়াই করেছে। তা না হলে কি আর সেমিফাইনালের মতো ক্রুশিয়াল ম্যাচে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যানটি চার চারবার নতুন জীবন পায়! তিনবার ক্যাচ মিস একবার নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান কোহলি। তা না হলে এক রানেই ফিরতে হতো তাকে। উইন্ডিজ ফিল্ডারদের নার্ভানেসের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কোহলি ৪৭ বলে খেলেছেন ৮৯ রানের হার না মানা ইনিংস। গতকাল ভারতের ইনিংসের শুরুটাই হয়েছিল দুই ‘লোকাল হিরো’ রোহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানেকে দিয়ে। আউট হওয়ার আগে দুই ওপেনার নিজেদের কাজটা ঠিক মতোই করেছেন। রোহিত খেলেছেন ৩১ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। আর রাহানে ৩৫ বলে করেছেন ৪০ রান। ভারতের ইনিংসে ছিল মাত্র তিনটি পার্টনারশিপ! ৬২, ৬৬, ৬৪ কী দারুণ ছন্দ! প্রথম জুটিতে রোহিত-রাহানে, দ্বিতীয় জুটিতে রাহানে-কোহলি, তৃতীয় জুটিতে কোহলি-ধোনি! কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর ম্যাচের নাটকীয় ঘটনাগুলো হয়ে গেল পরিসংখ্যানের খেরো খাতা কিছু শব্দ মাত্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর